পরীক্ষার ফি বাকি থাকায়...

পরীক্ষার ফি বাকি থাকায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিল হালতি ত্রিমোহনী ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ এক স্নাতক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে দেয়নি। ওই ছাত্রের পরীক্ষার ফি বাবদ ১৫০০ টাকা বাকি থাকায় তাঁকে স্নাতক (পাস) প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, হতদরিদ্র ওই ছাত্র লেখাপড়ার পাশাপাশি চায়ের দোকানে কাজ করে সংসার চালান। প্রথম পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় তাঁর শিক্ষা জীবনের একটি বছর নষ্ট হয়ে গেল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ১৫০০ টাকা ফি বাকি থাকার কারণে উপজেলার বিল হালতি ত্রিমোহনী ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই দিন আবদুস সাত্তার নামের প্রথম বর্ষের এক পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র সরবরাহ করেনি। ফলে তিনি বুধবারের ভূগোল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কলেজের দুই শতাধিক পরীক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে সকালে কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁরা পরীক্ষা বর্জন করে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন।

ঘটনাটি ইউএনও জানার পর গতকাল দুপুরে তিনি ওই কলেজে যান এবং পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আবদুস সাত্তারকে গতকালের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেন।

কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, দরিদ্র ছাত্র আবদুস সাত্তারকে পরীক্ষা দিতে না দিয়ে কর্তৃপক্ষ অন্যায় ও অমানবিক কাজ করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্নাতক প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থী আবদুস সাত্তার পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য ১ হাজার ৮০০ টাকা জমা দেন। সম্প্রতি তিনি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মঞ্জুরুল আলম আরও ১৫০০ টাকা জমা দিতে বলেন। তবে আবদুস সাত্তার টাকা দিতে না পারায় তিনি ওই ছাত্রকে প্রবেশপত্র দেননি। সাত্তার কান্নাকাটি করলে ওই শিক্ষক অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা উপাধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ারের নিষেধ আছে জানিয়ে প্রবেশপত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

আবদুস সাত্তার বলেন, ‘১৫০০ টাকার জন্য শিক্ষাজীবন থেকে আমার একটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। পাঁচ মাস আগে মা মারা গেছেন। বাড়িতে অসুস্থ বাবা ও ছোট বোন রয়েছে। তার পড়ালেখার খরচও আমাকে জোগাতে হয়। এ অবস্থায় আমার পক্ষে এক বছর পর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়তো সম্ভব না–ও হতে পারে।’

পরীক্ষা কমিটির সদস্য শিক্ষক মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমরা অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশ পালন করেছি। সাত্তারের আর্থিক অবস্থা এতটা খারাপ, তা আমাদের জানা ছিল না।’

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘আবদুস সাত্তার অনিয়মিত ছাত্র ছিল। তাকে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার বিষয়টি জানতাম না।’

ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো ঘটনাটিকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার পরপরই আমি কলেজে গিয়ে ওই ছাত্রের পরবর্তী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে পুরো ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছি। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’