ভুট্টার ফলন ভালো, তবে দামে কম

গাইবান্ধার চরাঞ্চলগুলোতে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টা কেটে খেতের পাশে রাখছেন এক কৃষক। সম্প্রতি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার রসুলপুর গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
গাইবান্ধার চরাঞ্চলগুলোতে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টা কেটে খেতের পাশে রাখছেন এক কৃষক। সম্প্রতি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার রসুলপুর গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

একসময় গাইবান্ধার চরাঞ্চলগুলো ছিল কেবলই ধু ধু বালুচর। এসব বালুচরে চাষাবাদ হবে, কোনো কৃষকই তা ভাবতে পারেননি। সেই বালুচরে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টা চরের কৃষকদের ভাগ্য পাল্টে দিয়েছে। কৃষকেরা এখন ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার দাম কম। এ কারণে কৃষকেরা খুব বেশি খুশি হতে পারছেন না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এবার জেলার সাতটি উপজেলার চরাঞ্চলের ১২ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৪৪৫ হেক্টরে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫১৯ মেট্রিক টন।

২৪ এপ্রিল সরেজমিনে দেখা গেছে, যেদিকে তাকানো যায়, সবুজ ভুট্টা। কৃষকেরা কেউ জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত, কেউ ভুট্টা কাটছেন। নারীরা ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত। জমিতে অনেক কৃষক দুটি ফসলের চাষ করেছেন। কৃষকেরা জানান, চরের জমিতে বোরো ধানের ফলন ভালো হয় না। তাই কৃষকেরা ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘এ্যাবারকা তিন বিগেতেই ভুট্টে নাগাচি। আবাদ ভালো হচে। ভুট্টে বেচি বেচি সোংসারের কামোত নাগানো হয়, কিনতো ভুট্টের দাম নাই।’ একই গ্রামের কৃষক নয়া মিয়া (৫৫) বলেন, ‘ভুট্টের আবাদ করতে বেশি ট্যাকা নাগে না। কম খরোচে ভালো নাব করা যায়। তাই দুই বিগেত ভুট্টে করচি। ফলোন ভালো হচে, হামরা অনেক খুশি হচি।’

সদরের কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, চরের জমিতে ভুট্টার আবাদ ভালো হয়। কৃষকেরা এখন ভুট্টার চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও ভুট্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

একই উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের বাজে চিথুলিয়া গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় এ মৌসুমে ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ২৬০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়। ভুট্টা চাষে অল্প সময় লাগে, খরচও কম লাগে। তাই বেশি লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু এ বছর ভুট্টার দাম কম। তিনি বলেন, ‘এক হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষে উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ ভুট্টা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। অথচ গত বছর প্রতি মণ ভুট্টা ৬৫০-৭০০ টাকা বিক্রি করেছি।’

ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি গ্রামের কৃষক সাদেকার রহমান বলেন, ‘এবার আমি ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। চরে বসবাস করলেও আমাদের কোনো অভাব নেই।’

গতকাল বিকেলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম ফেরদৌস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলায় ৩৫০ বিঘা ভুট্টার প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। এ ছাড়া ভুট্টা চাষে কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।