উন্নয়নকাজে ধীরগতি

সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে খোয়া-বালু। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। উড়ছে ধুলা। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা নগরের ডুলিপাড়া এলাকায় বরুড়া-চাপাপুর সড়কে।  ছবি: প্রথম আলো
সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে খোয়া-বালু। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। উড়ছে ধুলা। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা নগরের ডুলিপাড়া এলাকায় বরুড়া-চাপাপুর সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার প্রধান তিনটি সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে ঢিমেতালে। এ কারণে দীর্ঘদিন পর সড়কগুলোর সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হলেও ভোগান্তি কমছে না মানুষের। সড়ক তিনটির কোথাও কিছু অংশের কাজ হয়ে থেমে আছে। কোথাও কাজের জন্য যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, সড়কের কাজ ধীরগতিতে চলায় গ্রীষ্মের এ মৌসুমে সড়কগুলোয় ধুলা উড়ছে। এ ধুলায় যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক হয়ে উঠছে কাদাময়। তখন চলাচল করা আরও দায়।

সড়ক তিনটি হলো বরুড়া-চাঁপাপুর, বরুড়া-খাজুরিয়া ও বরুড়া-নিমসার। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এ তিনটি সড়ক নির্মাণ করছে।

মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা কেশব রায় চৌধুরী বলেন, বছরের পর বছর সড়কগুলো খানাখন্দে ভরা ছিল। এখন কাজ শুরু হলেও চলছে ধীরগতিতে। এতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

সওজ সূত্রে জানা যায়, বরুড়া থেকে কালিরবাজার ও বার্ড হয়ে চাঁপাপুর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার। কুমিল্লা নগরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএবি-আরসি প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড মশিউর রহমান চৌধুরী এ কাজ পায়। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ৮ জুন এ কাজ শেষ করার দিন নির্ধারিত আছে। এ কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয় ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৪ টাকা। এ টাকায় সড়কটির কাজ হচ্ছে।

গত বুধবার এ সড়কে গিয়ে দেখা যায়, ঢুলিপাড়া থেকে টমছমব্রিজ ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত নালা নেই। টমছমব্রিজ এলাকায় বহুতল একটি ভবনের পানি নামার পথ রাখা হয়নি। টমছমব্রিজ এলাকায় সড়কে একটি বাজার রয়েছে। সেখানে সিটি করপোরেশন নালা করেছে। সেখানে মাটি কেটে সড়কের দিকে ঢালু করায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সড়কের আগের কার্পেটিং তুলে নতুন করে খোয়া দেওয়া হয়েছে। বালু উড়ছে।

এই সড়ক দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের কার্যালয়, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) ও বিবিরবাজার স্থলবন্দর যেতে হয়।

জানতে চাইলে জেলা সওজ কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রেজা-ই-রাব্বি বলেন, নালা না করলে এ সড়কের ঢুলিপাড়া থেকে টমছমব্রিজ সড়ক তিন মাসও টিকবে না। এ সড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত হচ্ছে। কোথাও কোথাও ২৪ ফুট প্রশস্ত হবে। এ সড়কের ২০ শতাংশ কাজ হয়েছে। মে মাসের মধ্যে চাঁপাপুর থেকে নন্দনপুর পর্যন্ত অংশের কাজ হওয়ার কথা।

সওজ সূত্র জানায়, বরুড়া-খাজুরিয়া সড়কের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৯ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮ ফুট। ৫২ কোটি ৪৮ লাখ ৭ হাজার ৫৪২ টাকা ব্যয়ে এ সড়কের কাজ হচ্ছে। ইতিমধ্যে মাটি ভরাট করে সড়ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এখন সড়কের পুরোনো কার্পেটিং তুলে খোয়া দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও সুরক্ষা দেয়াল করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়। শেষ হবে ২০২০ সালের ৪ জুন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএবি-আরসি প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড মশিউর রহমান চৌধুরীর নামে কাজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ সড়কের ৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে।

আদ্রা এলাকার সানাউল্লাহ বলেন, ‘সড়কের একটি অংশে দুদিকে আমার জমি আছে। কিন্তু সড়কের জন্য জমি নেওয়া হলেও আমাকে ক্ষতিপূরণ কিংবা অধিগ্রহণ বাবদ কিছু দেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে জেলা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বলেন, অধিগ্রহণের জন্য কোনো ধরনের অর্থ বরাদ্দ নেই। নির্ধারিত সময়ে কাজ করার জন্য ঠিকাদারদের বলা হয়েছে।

সওজ সূত্রে আরও জানা যায়, বরুড়া-নিমসার সড়কের দৈর্ঘ্য ১৩ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। ৩৯ কোটি ৫৯ লাখ ৩৯ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এ সড়কের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। রাজধানী ঢাকার ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন এ কাজ পায়। ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২৩ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

জানতে চাইলে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি আসাদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা কাজ করার জন্য মালামাল নিয়েছি। বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও নিয়ে রেখেছি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।’