লোভে পড়ে খোয়া ৩ কোটি টাকা

‘জিন দিয়েছে’ দেড় হাজার কোটি টাকা। তবে সেই টাকা নিতে হলে জিনের নামে ‘শিরনি’ বাবদ খরচ করতে হবে সাড়ে তিন কোটি টাকা। ধাপে ধাপে খরচের ওই টাকা দিয়েও দিয়েছেন ‘জিনের বাদশা’কে। এরপর যেদিন ড্রামভর্তি দেড় হাজার কোটি টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা, সেদিনই উধাও ‘জিনের বাদশা’ ও তাঁর সহযোগীরা।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় ঘটেছে এ ঘটনা। ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম এমরান আহমদ। পেশায় ব্যবসায়ী এমরানের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তিন ব্যক্তিকে গত বৃহস্পতিবার আটক করেছে। গতকাল শুক্রবার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন কথিত জিনের বাদশা কামরুল ইসলাম, তাঁর বাবা আবদুল কাদির ও মা রেনু বেগম। তাঁদের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুটবটতলা গ্রামে।

 পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী এমরান আহমদের বাড়ি উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের মক্রমপুর গ্রামে। জগন্নাথপুর বাজারে তাঁর হোটেল ও স্যানিটারির বড় ব্যবসা রয়েছে। এমরানের সঙ্গে ২০১৮ সালে জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হকের মাধ্যমে পরিচয় হয় কামরুলের। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় হলেও পরিবার নিয়ে থাকতেন জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়িতে।

ব্যবসায়ী এমরান আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামরুল আমার কাছে নিজেকে জিনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দেন। জিনের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানান। বলেন, তাঁর ঘরে কয়েকটি ড্রামের ভেতরে জিনের দেওয়া ১৫০০ কোটি টাকা রয়েছে।কিন্তু ওই টাকা তিনি নিজে ব্যবহার করতে পারবেন না। অন্য কাউকে দিতে পারবেন। আমাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁর ঘরে রাখা ড্রামভর্তি টাকাও দেখান।’

এমরানকে ওই টাকার পুরোটা দিয়ে দিতে চান কামরুল। তবে এ–ও বলেন, এই টাকা নিতে হলে এমরানকে সাড়ে তিন কোটি টাকা ‘জিনের জন্য শিরনি’ হিসেবে খরচ করতে হবে। ১৫০০ কোটি টাকার লোভ সামলাতে পারেননি এমরান। বিভিন্ন সময়ে কিস্তিতে তিনি সাড়ে তিন কোটি টাকা কামরুলের হাতে তুলে দেন। এরপর ড্রামভর্তি টাকা এমরানকে দেওয়ার জন্য ২৮ নভেম্বর ধার্য করা হয়। ওই দিন কামরুলের বাড়িতে যান এমরান। কিন্তু গিয়ে দেখতে পান, বাড়িতে কেউ নেই। ঘরের ভেতরে ড্রামগুলো খালি পড়ে আছে।

এরপরই এমরান বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন। তবে টাকা ফিরে পাওয়ার আশায় তিনি কামরুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। উপায়ান্তর না দেখে গত বুধবার জগন্নাথপুর থানা-পুলিশকে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন। গতকাল শুক্রবার কামরুলসহ তিনজনকে আটকের পর সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পুলিশ নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুটবটতল গ্রামে অভিযান চালিয়ে কামরুল ইসলামসহ ওই তিনজনকে আটক করেছে। মামলার আলামত হিসেবে ছয়টি ড্রাম উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে এসআই বলেন, কামরুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমরানের কাছ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এই চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে। এমরানের সাড়ে তিন কোটি টাকা তাঁরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তার ও ঘটনাটির আরও তদন্ত চলছে।