বিএনপির একজনকে সংসদে পেয়ে স্বস্তি আ.লীগে

একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপি থেকে নির্বাচিত একজনকে সংসদ সদস্য হিসেবে পাওয়ায় আওয়ামী লীগে স্বস্তি এসেছে। দলটি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলছেন, বিএনপি থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ায় এই সংসদে নির্বাচিত সব দলের প্রতিনিধিই থাকছে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি থেকে নির্বাচিত সদস্য থাকায় সংসদ প্রাণবন্ত হবে। ভোট নিয়ে বিএনপি যেসব অভিযোগ করছে, এতেও ভাটা পড়বে।

আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে বিএনপি থেকে নির্বাচিত এক বা একাধিক নেতা যদি সংসদে আসেন, তাহলে বিএনপিতে দুটি পক্ষ তৈরি হবে। একটি হবে সংসদের ভেতরের বিএনপি, অন্যটি সংসদের বাইরের বিএনপি। আওয়ামী লীগ মনে করে, এতে সংসদের বাইরের বিএনপির সঙ্গে ভেতরের বিএনপির দ্বন্দ্ব হবে। অনেক ক্ষেত্রে সংসদের ভেতরের বিএনপি, বাইরের বিএনপি থেকে শক্তিশালী হবে, যা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে। অন্যদিকে, সংসদে নির্বাচিত সব দলের উপস্থিতি সংসদকে আরও বেশি কার্যকর হবে। সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা তৈরি করবে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ছয়সহ এবং তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মোট আটজন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের নির্বাচিত দুজন আগেই শপথ নিয়েছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান। বিএনপি থেকে জাহিদুরই প্রথম শপথ নিলেন। বাকি পাঁচজনের মধ্যে আরও কয়েকজন শপথ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি একটা বড় দল। তাদের বিরাট জনসমর্থন আছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ছয়টি আসনে জয় পেলেও সংসদে বিএনপি নেতার উপস্থিতিকে কেবল একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখা হবে না; বরং বিএনপির মতো বড় দলের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা হবে। এই নেতারা বলছেন, বিএনপির নির্বাচিত সাংসদের প্রতি গণমাধ্যমের দৃষ্টি থাকবে। ফলে সংসদের ভেতরের বিএনপি, সংসদের বাইরের বিএনপি থেকে কম শক্তিশালী হবে না। এতে আওয়ামী লীগই লাভবান হবে। বিএনপির মধ্যে দুটি পক্ষ তৈরি হবে।

আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আলাপকালে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির যিনি শপথ নিয়েছেন এবং আরও যদি কেউ শপথ নেন, তাহলে দল থেকে তাঁরা বহিষ্কৃত হবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা হারিয়ে যাবেন না। কেননা, তাঁরা একটা প্ল্যাটফর্ম পাবেন। আর সেটা হলো জাতীয় সংসদ। সেখানে তাঁদের বক্তব্য-বিবৃতি ও কর্মকাণ্ড গণমাধ্যমে আসবে। প্রচার হবে। সংসদের স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পাবেন। সেখানকার কথাও গণমাধ্যমে আসবে। ফলে, যে বিএনপি সংসদের বাইরে, তাদের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে সংসদের ভেতরের বিএনপি গুরুত্ব পাবে। তা ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তির যে দাবি দলের নেতারা করে আসছেন, সাংসদেরা সেই দাবি করলে তার প্রভাব বেশি হবে। সরকারি দল ও বিএনপি সাংসদদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানও সংসদের ভেতরের বিএনপিকে বাইরের বিএনপি থেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ‘আমি আহ্বান জানাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিএনপির বাকিরা যেন শপথ নেন।’ তিনি বিএনপির জাহিদুরের শপথ নেওয়ায় তাঁকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। হানিফ বলেছেন, ভোটারদের ভোটের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।

অবশ্য আওয়ামী যেভাবে স্বস্তিতে ভুগছে, বিএনপি সেটাকে পাত্তা দিচ্ছে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেছেন, কয়েকজন যদি সংসদে যান, তাহলে বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না। বরং যাঁরা যাবেন, তাঁদের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে না। এলাকায় রাজনৈতিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শপথে নেওয়ার পেছনে সরকারের চাপ আছে। অবশ্য আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীনেরা তো চাইবেই যেন সবাই সংসদে আসে। এটা সরকারের একটি সফলতাও। আওয়ামী লীগের এই চাওয়াকে যদি বিএনপি চাপ ভাবে, তাহলে সেটা বিএনপির নিজস্ব বিষয়।

শপথ নেওয়ার পর বিএনপির জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অপেক্ষা করছেন, নির্বাচিত বাকি পাঁচজনের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাড়া বাকি চারজনই শপথ নেবেন। এরপর তাঁরা সবাই মিলে অধিবেশনে যোগ দেবেন।

জাহিদুর রহমান বলেন, দল তাঁকে বহিষ্কার করলেও তিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হবেন না। সংসদে তিনি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার থাকবেন।