বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত আছে, মামলা নেই

নিরাপদ খাদ্য আইনের প্রয়োগ বাড়াতে রাজশাহীতে বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
নিরাপদ খাদ্য আইনের প্রয়োগ বাড়াতে রাজশাহীতে বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে আইন করা হয়েছে। বিচারের জন্য আদালত রয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত’। কিন্তু আইন-আদালত করার তিন বছরেও রাজশাহীতে এই আদালতে একটা মামলাও হয়নি। শনিবার সকালে রাজশাহীতে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’ এর প্রয়োগ ও করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় উঠে এসেছে এমন চিত্র।


রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সম্মেলনকক্ষে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও রাষ্ট্রায়াত্ব মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় বলা হয়, ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর প্রণীত হয় ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আইনটি কার্যকর হয়েছে। এরপর ওই বছরের ৩০ জুন এক প্রজ্ঞাপনে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগ রাজশাহীর জন্য ১ নম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও মহানগর এলাকার জন্য ২ নম্বর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত’ হিসেবে নির্ধারণ করে। কিন্তু আইন কার্যকরের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এসব আদালতে কোনো মামলা নেই।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি জেলা ও দায়রা জজ মীর শফিকুল আলম বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য আইন কার্যকরের পর রাজশাহীতে এ আইনে একটি মামলাও দায়ের হয়নি। তার মানে আমরা নিরাপদ খাদ্য পাচ্ছি অথবা ভেজাল খাবারই খাচ্ছি-বিষয়টি এমন নয়।’ তিনি আরও বলেন, এই আইনের আশ্রয় নেওয়ার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, দৃষ্টিনন্দন ও লোভনীয় খাবার মানুষকে আকর্ষণ করে। বাজারে রং মেশানো জিলাপি থাকলে সেটিই বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু রং মেশানো জিলাপি নিরাপদ নয়, এটা অনেকেই ভুলে যায়। তাই এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে গণমাধ্যমকে ভূমিকা নিতে হবে। প্রয়োজনে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজারে একটা বুথ খুলতে পারে। অনিরাপদ খাবার হাতে তুলে দেওয়া হলে মানুষ যেন সেখানেই ভিযোগ করে আইন সহায়তা নিতে পারে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মতো ঘটনাস্থলেই বিচার হলে আইনটির কার্যকারতা বৃদ্ধি পাবে।

নিরাপদ খাদ্য আইনের ৬৬ ধারা অনুসারে খাদ্য ক্রেতা ও ভোক্তারা তাঁদের যেকোনো অভিযোগ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অথবা তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। পরে তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তের পরে অপরাধ পেলে খাদ্য আদালত মামলা করবেন। বর্তমানে দেশে ৭২৫ জন স্যানিটারি ইন্সপেক্টর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরাই নিরাপদ খাদ্য আইনের মামলার বাদী হন। তবে রাজশাহীতে কোনো মামলা হয়নি।

এ ব্যাপারে কর্মশালায় জেলার সিভিল সার্জন ডা. কাজী মিজানুর রহমান বলেন, জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় আইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনি সিভিল সার্জন হিসেবে নতুন যোগ দেওয়ায় এটি সম্পর্কে জানতেন না। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে স্যানিটারি ইন্সপেক্টররাই এ আইনের মামলার বাদী হবেন, এ বিষয়টিও তিনি জানতেন না। তবে আইনটি কার্যকরের ব্যাপারে তাঁর যে করণীয় রয়েছে, সেগুলো তিনি করবেন।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান তালুকদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুল ইসলাম। এতে রাজশাহীর বিভিন্ন আদালতের বিচারক, পুলিশ, বিজিবি, পিবিআই, র‌্যাব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।