চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিত প্রতারক চক্র, গ্রেপ্তার ৫ জন কারাগারে

মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত, ঢাকা। ছবি: ফাইল ছবি
মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত, ঢাকা। ছবি: ফাইল ছবি

সামরিক বাহিনীতে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকার চেক নেওয়ার মামলায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ শনিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন।

কারাগারে পাঠানো পাঁচ আসামি হলেন ঝিনাইদহের ফারুক হাসান (৩৮), নোয়াখালীর নজরুল ইসলাম (৫৩), যশোরের মাসুদ রানা (৩২) ও সাইদুল ইসলাম (২৫) এবং কুমিল্লার আবুল কাশেম (৬০)। এই পাঁচ আসামিকে ২০ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের বছিলা গার্ডেন সিটির মোহাম্মাদীয়া বেকারিসংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-২)। আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ভুয়া নিয়োগপত্র এবং ৮৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক। এসব চেকে টাকার পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৫৩ হাজার ৮০ টাকা।

এ ঘটনায় র‍্যাব-২–এর নায়েব সুবেদার কাজী আজাদ বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। পরে পাঁচ আসামিকে ২২ এপ্রিল ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। আদালত প্রত্যেক আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর পলাতক আসামিরা হলেন রাজবাড়ীর মোক্তার হোসেন (৬০), ঝিনাইদহের হিরন (২৭), নড়াইলের শহিদুল (২৮), যশোরের বুলবুল আহম্মেদ (৩৬), গোপালগঞ্জের মামুন (৩৬), মানিকগঞ্জের টুটুল (৩২) ও আলী (৩৮), যশোরের কামারুজ্জামান (৪০), সাইফুল ইসলাম পলাশ, হাশেম (৩৫), কামরুল হাসান (৪০) ও আলমগীর।

আদালতকে মোহাম্মদপুর থানা–পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, কুষ্টিয়ার সানজিদ ইসলাম নামের এক যুবক ৯ এপ্রিল র‍্যাব-২-এ অভিযোগ করেন। অভিযোগনামায় তিনি উল্লেখ করেন যে তাঁর সঙ্গে মাসুদ রানা ও সাইদুলের (দুজনই আসামি) কুষ্টিয়াতে পরিচয় হয়। এরপর সানজিদকে তাঁরা সেনাবাহিনীতে চাকরি দিতে পারবেন বলে জানান। মোহাম্মদপুরে তাঁদের অফিসে সানজিদকে আসতে বলা হয়। সম্প্রতি সানজিদ সেই অফিসেও যান। এরপর সাইদুল, মাসুদসহ কয়েকজন তাঁকে বিভিন্ন প্রশ্নপত্র দিয়ে সমাধান করতে বলেন। চাকরি হলে তাঁকে ৮ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানানো হয়। চাকরির আগে দিতে হবে ৪ লাখ টাকা, পরে আরও ৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া জামানত হিসেবে রাখতে হবে চেক ও চুক্তিনামা। এ কথা সানজিদ তখন তাঁর বাবাকে জানান। কিন্তু তাঁর বাবা টাকা পাঠাতে রাজি হননি। তখন আসামি মাসুদ ও সাইদুল সানজিদকে বলেন, ‘তোমার চাকরি ফাইনাল। টাকা না দিয়ে যেতে পারবে না।’ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে সানজিদ সেখান থেকে কৌশলে বেরিয়ে আসেন। পরে র‍্যাব-২ অফিসে গিয়ে এ ঘটনা জানান তিনি।

ভুক্তভোগী সানজিদ গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁকে ঢাকায় ডেকে আনেন মাসুদ ও সাইদুল। পরে তিনি জানতে পারেন যে এই দুজন প্রতারক চক্রের সদস্য।

তদন্ত কর্মকর্তা ও মোহাম্মদপুর থানার এসআই জহিরুল ইসলাম আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানান, সানজিদের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার পর র‍্যাব-২ সদস্যরা আসামিদের অফিসের আশপাশে গুপ্তচর নিয়োগ করেন। তখন জানা যায় যে বেশ কয়েক দিন ধরে সেখানে (মোহাম্মদপুরে) তিন থেকে চারজন লোক বসবাস করছেন। পরে ওই অফিসে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতকে পুলিশ বলছে, আসামিরা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর রূপ নিয়ে সামরিক বাহিনীতে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলতেন। এরপর চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়া হতো। আসামি নজরুল ইসলাম নিজেকে সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতেন। মাসুদ রানা পরিচয় দিতেন নৌবাহিনীর অফিসার হিসেবে। এজাহারে নাম থাকা আসামি ফারুক, কাশেমসহ সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্র চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা ও মোহাম্মদপুর থানার এসআই জহিরুল ইসলাম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসামিরা চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।