ফেসবুক পোস্টে মাকে খুঁজে পেলেন মেয়ে!

উদ্ধারের পরে চিকিৎসা সেবা পেয়ে কিছুটা সুস্থ আনোয়ারা। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধারের পরে চিকিৎসা সেবা পেয়ে কিছুটা সুস্থ আনোয়ারা। ছবি: সংগৃহীত

এক বছর আগে মিরসরাইয়ের সাহেরখালী ইউনিয়নের বাবার বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন আনোয়ারা বেগম (৬৮)। অনেক খোঁজখবর করেও এই বৃদ্ধার কোনো সন্ধান পাননি স্বজনেরা। তবে শনিবার একদল তরুণের চেষ্টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তাঁর খোঁজ মিলেছে। জানা গেছে, ওই বৃদ্ধা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং এই এক বছর পথে পথে দিন কেটেছে তাঁর।

আনোয়ারা বেগমকে উদ্ধারে সহায়তা করেছে চট্টগ্রাম নগরকেন্দ্রিক ফেসবুকনির্ভর একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্যরা হলেন—সানজিদা আফরোজ, মাছুম ভূইয়া, তাপস বড়ুয়া, রিগান মোর্শেদি ও সূর্য দাশ। তাঁরা সবাই ফেসবুকভিত্তিক ওই গ্রুপের সদস্য। তবে এই পাঁচজন ছাড়াও শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীসহ আরও ১৫-২০ বন্ধু সক্রিয় রয়েছেন গ্রুপটিতে।

গ্রুপের সদস্য সানজিদা আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ২২ এপ্রিল দুপুরে চট্টগ্রাম শহরের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন তিনি। হঠাৎ তাঁর চোখ আটকে যায় জনাকীর্ণ রাস্তার পাশের ফুটপাতে। তিনি দেখতে পান গায়ে মলমূত্র মাখা মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধা পড়ে আছেন এবং কাতরাচ্ছেন। পরে সেখান থেকেই ফেসবুক গ্রুপের কয়েকজন বন্ধুকে সানজিদা বিষয়টি জানান। পরে বন্ধুদের কয়েকজন মিলে ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে নেওয়ার আগে তাঁরা ওই বৃদ্ধাকে গোসল করান এবং নতুন কাপড় পরিয়ে দেন। পরে হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আনোয়ারা বেগমকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা চলাকালে আনোয়ারার ছবিসহ একটি পোস্ট ফেসবুকে দেওয়া হয়।

ওই ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার আনোয়ারা বেগমের ছবিসহ পোস্টটি চোখে পড়ে সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট দারোগারহাট এলাকার স্থানীয় নুর ইসলামের। বৃদ্ধাকে চেনা চেনা লাগায় নূর ওই ছবিটি দেখান তাঁর ভাবি আয়েশা আক্তারকে। কারণ, আয়েশার মা এক বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। আয়েশা ছবি দেখে বুঝতে পারেন যে ইনিই তাঁর হারিয়ে যাওয়া মা আনোয়ারা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে আয়েশা। ফেসবুকে ছবি দেখে পোস্ট দেওয়া মাছুম ভূইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। পরে শনিবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে মায়ের দেখা পান আয়েশা। হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পেয়ে এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

ফেসবুক গ্রুপের ওই বন্ধুদের কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুক গ্রুপের ওই বন্ধুদের কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত

শনিবারই মা আনোয়ারাকে হাসপাতাল থেকে মিরসরাইয়ের বাসায় নিয়ে যান মেয়ে আয়েশা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ বছর আগে বাবার সঙ্গে তাঁর মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকেই মাঝে মাঝে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তেন। এক বছর আগে একদিন হঠাৎ বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান তিনি। এরপর অনেক খুঁজেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফেসবুক ব্যবহার করে অনেক ভালো কিছু করা যায় উল্লেখ করে ওই ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানান আয়েশা।

ওই ফেসবুক গ্রুপটির সদস্য সূর্য দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেসবুকে গ্রুপ তৈরি করে আমরা কিছু মানুষ একটি বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে আমরা সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে চাই। রাস্তায় পড়ে থাকা এই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা নিজেরাও খুব আনন্দিত।’