এখন সময় কাঁচা আমের

কাঁচা আম নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতা। গতকাল কারওয়ান বাজারে।  ছবি: প্রথম আলো
কাঁচা আম নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বিক্রেতা। গতকাল কারওয়ান বাজারে। ছবি: প্রথম আলো

শৈশবে ছড়ায় ছড়ায় বর্ণ পরিচয়ের মধ্য দিয়েই আমের সঙ্গে আমবাঙালির সম্পর্কের শুরু। ‘অ-তে অজগর আসছে তেড়ে’ যেমন বাঙালির সাপের ভয় কাটতে দেয়নি, ঠিক তেমনি ‘আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে’ গ্রামীণ কিংবা শহুরে বালক-বালিকার মনে কল্পনার যে দুরন্ত ট্রেন ছুটিয়ে দিয়েছে তা এখনো ছুটছে। এই ইট-কাঠের নগরে ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর সুখ পাওয়া দুষ্কর। তাই বলে জিভে জল আনা কাঁচা আমের স্বাদ পেতে তো বাধা নেই।

ঢাকার পাড়া-মহল্লার সবজির দোকান কিংবা ছোট-বড় বাজার সবখানেই এখন কাঁচা আমের দেখা পাওয়া যাচ্ছে । স্কুলগুলোর সামনে কাঁচা আমের ভর্তা কিংবা কাসুন্দি দিয়ে আমমাখা খেতে ভিড় করছে শিক্ষার্থীরা। গরমে কাঁচা আমের শরবতও বিক্রি হচ্ছে দেদার। আবার বাড়িতে আচার, আমমাখা, চাটনি, শরবত বা আচার তৈরি কিংবা আম-ডাল রান্নার জন্যও কাঁচা আম কিনছেন অনেকে।

কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কাঁচা আম এসেছে সেই ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। প্রথম পর্যায়ে টেকনাফ থেকে আসা আমের দাম ছিল বেশি। এখন সাতক্ষীরা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আমের পরিমাণ বাড়ায় দাম তুলনামূলক কম।

কাঁচা আমের আড়তদার মোবারক হোসেন জানান, কাঁচা আম সাধারণত কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। এসব আমের বেশির ভাগ ক্রেতা বিভিন্ন এলাকার বাজারের সবজি ব্যবসায়ী, পাড়া–মহল্লার সবজির দোকানদার ও ফেরিওয়ালারা। এসব জায়গা থেকেই সাধারণ ক্রেতারা নানাভাবে খাওয়া কিংবা ব্যবহারের জন্য আম কেনেন। আবার ঢাকার যেসব রেস্তোরাঁ কিংবা জুসের দোকানে কাঁচা আমের শরবত বিক্রি হয় তারা এটা সংগ্রহ করে এলাকার বাজার থেকে।

কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এক কেজি কাঁচা আম আড়াই শ টাকাতেও বিক্রি করেছেন তিনি। এখন তা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। তাঁর সামনে রাখা ঝুড়িতে তিন ধরনের কাঁচা আম দেখা গেল। এর মধ্যে কাঁচামিঠা আম তিনি বিক্রি করছেন ১০০ টাকা কেজিতে। বড় আকারের গুটি আম ৮০ টাকা কেজি এবং মাঝারি ও ছোট আকারের আম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে।

এ সময় সেখানে নাখালপাড়া থেকে আম কিনতে এসেছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আমিনুল হক। তিনি জানান, বাড়িতে আচার বানানোর জন্য তিনি ১০ কেজি আম নিতে চান। তবে ভালোভাবে বাজার যাচাই করে তবেই কিনবেন। এ জন্যই কারওয়ান বাজারে আসা।

আবার শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারে ৭০ টাকা কেজি দরে মাঝারি আকারের পাঁচ কেজি আম কিনতে দেখা গেল বিলকিস বেগমকে। একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত এই নারী বললেন, বাজারে যেমন আম আছে প্রচুর, তেমনি এসব কাঁচা আমের ব্যবহারও অনেক রকমের। কিছু আম দিয়ে আচার হবে, কিছু রাখা হবে ডাল, আমভর্তা ও শরবত খাওয়ার জন্য। গরমের সময় আমের শরবত খুবই উপকারী।

মিরপুরের বাসিন্দানুসরাত জাহানের পছন্দ আগুনে পোড়ানো কাঁচা আমের শরবত। তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে আম খোসা ছাড়িয়ে আগুনের আঁচে পোড়ানো হয়। পরে সেটা ব্লেন্ডারে দিয়ে চিনি, লবণ, পুদিনাপাতা ও কাঁচা মরিচ সহযোগে তৈরি করা হয় পোড়া আমের শরবত। আমার পরিবারের প্রত্যেকের এটা পছন্দ।’

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে জোগান বেশি থাকলে কাঁচা আমের দাম কমে যায়। সাধারণত ঝড়ের পরেই এটা ঘটে। তাই নগরবাসী গাছতলা থেকে আম কুড়িয়ে খাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলেও, ঝড়ের পর বাজারে ঢুঁ দিতে পারেন কম দামে কাঁচা আম পাওয়ার সুযোগ নিতে।