জালিয়াতি ধরলেন যাঁরা, তাঁরাই বাদ

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভোটার হতে জালিয়াতি ও ভুয়া ভোটার হওয়ার বিষয়টি যে নির্বাচন বোর্ডের কাছে ধরা পড়েছিল, তাঁদের বাদ দিয়ে গঠন করা হয়েছে নতুন নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড। গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট চেম্বারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সিলেট চেম্বারের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বর্তমান পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ তিন মাস বৃদ্ধি করেছে এবং নির্বাচন বোর্ড ও আপিল বোর্ড পুনর্গঠনক্রমে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদকে আপিল বোর্ড চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানকে নির্বাচন বোর্ড চেয়ারম্যান করে এই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। তবে পুনর্গঠিত দুই বোর্ডে আগের কোনো সদস্য রাখা হয়নি। আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে চেম্বারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

নির্বাচন বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে সদস্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. আশরাফুল হক ও আইনজীবী দিলীপ কুমার কর। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান আসাদউদ্দিন আহমদের সঙ্গে সদস্য হিসেবে আছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার উম্মে সালিক রুমাইয়া ও সিলেট চেম্বারের সাবেক পরিচালক হারুন আল রশীদ।

২০১৯-২১ মেয়াদের নির্বাচন পরিচালনায় গত বছরের ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন ও আপিল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। গত ৮ জানুয়ারি বোর্ডের সদস্যরা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানে চেম্বারের বিগত (২০১৭-১৮) নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান বিজিত চৌধুরীকে চেয়ারম্যান এবং আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও মো. সাদেককে সদস্য করা হয়েছিল। আপিল বোর্ডে ছিলেন জ্যেষ্ঠ একজন আইনজীবীসহ তিনজন।

পুনর্গঠিত বোর্ডে আগের নির্বাচন ও আপিল বোর্ডের দুজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্যকে রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বারের একটি সূত্র জানায়, দুটো বোর্ড পুনর্গঠন করে নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্য নিযুক্ত হওয়ায় বিধি অনুযায়ী আগে গঠিত বোর্ডটি বিলুপ্ত হয়েছে। এটি সিলেট চেম্বারের বর্তমান পরিচালনা পরিষদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে বিজিত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে এখন পর্যন্ত লিখিতভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে এটুকু বলতে পারি, আমাদের মাধ্যমে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সদস্য হয়ে ভুয়া ভোটার ধরা পড়েছে এবং এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটি সত্যতা পেয়েছে। জালিয়াতি যে নির্বাচন বোর্ড সদস্যদের হাতে ধরা পড়ল, তাঁদের বাদ দেওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট চেম্বারের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২৭ এপ্রিল। নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন বোর্ডের বাছাইয়ে ভুয়া কর সনদে ৮৮ জনের ভোটার হওয়ার তথ্য প্রাথমিকভাবে ধরা পড়ে। নির্বাচন বোর্ড নির্বাচন স্থগিত করলে জালিয়াতির বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত করে। চেম্বার সূত্র বলছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিগত তিনটি অধিবেশনে ১ হাজার ৪০৩ জন সদস্য (ভোটার) নেওয়া হয়। সদস্য পদে আবেদনপত্রের অনুমোদনসহ বিভিন্ন বিষয়ে গত ২৩ মার্চ ১৩তম সভার আয়োজন করে সিলেট চেম্বার। এর আগেই জালিয়াতি ও ভুঁইফোড় সংগঠন ধরা পড়ে। এ নিয়ে গত ৩০ মার্চ প্রথম আলোয় ‘ভোটার হতে নানা জালিয়াতি, ২৭ এপ্রিলের নির্বাচন স্থগিত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে ওই দিনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কর্মকর্তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. জালাল উদ্দিন ১৭ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাখিল করেছেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তদন্তে ৪০ ভাগ অযোগ্য সদস্য ভোটার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় ‘ভোটার হওয়ার অযোগ্য সিলেট চেম্বারের ৪০ ভাগ সদস্য’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।

তবে এ প্রসঙ্গে সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ২০ জন সদস্যের তথ্য যাচাই করা হয়। এর মধ্যে ৮ জনের তথ্যে অসংগতি পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এই অনুপাতে ৪০ ভাগ বলাটা অনুমাননির্ভর কথা।’