রাজনীতিবিদেরা সব সময় খারাপ নন: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনীতিবিদেরা সব সময় খারাপ নন। রাজনীতিবিদেরা সবসময় শুধু স্বার্থের জন্য কাজ করেন না। রাজনীতিবিদেরা ত্যাগ স্বীকার করেন। আর ত্যাগ স্বীকার করেন বলেই বড় জিনিস অর্জন করা সম্ভব হয়।

আজ রোববার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) বার্ষিক সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা যেমন আপনাদের সমস্যা বুঝি। ঠিক একইভাবে আমাদের সমস্যাগুলো আপনারা অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকেরা পত্রিকায় এক কলাম লিখে দিলেই আমার সারা জীবনের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। তার আগে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু অনেকে কষ্ট করে সেটুকুও করেন না। বোঝার চেষ্টা করেন না। নিজের একটা ধারণা থেকে সেটা বলে দেন। এটা দল, রাজনীতি এবং দেশের যে অবস্থা, সে অবস্থার ক্ষতি করছে।’

ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আজকে রাজনীতিটা হচ্ছে না। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়িঘর শেষ হয়েছে এবং অনেককে প্রাণও দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন দখল করে নিয়েছে। গণমাধ্যমের মালিকানা পুরোপুরিভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সংবাদমাধ্যমের যে সংগঠন, সেই সংগঠনকে বিভক্ত করে দিয়ে তারা সেখানেও পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ন্যায়ের জয় অবশ্যই হবে। অন্যায় পরাজিত হবে। সত্যের জয় হবেই। আর বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক ইতিহাস এবং জনগণের সংগ্রামের যে ইতিহাস, সেটা কখনো ব্যর্থ হয়নি। জয়ী আমরা হবোই।’

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খুব ব্যক্তিগতভাবে জানি, আপনাদের অনেক সংবাদকর্মীর কাজ নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি যে অনেক সংবাদকর্মী অত্যন্ত আর্থিক কষ্টে আছেন। এটাই হচ্ছে এখনকার রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতির পরিণতি। আমাদের বহু ছেলে আছেন যাঁরা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা বিএনপি করেন। তাঁরা ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন, হকারের কাজ করছেন এবং অনেকে কাজ না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন। এটা বাস্তবতা।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করছি, আমরা অনেক আরাম-আয়েশে রাজনীতি করছি। এ কথা যদি ভেবে থাকেন, তাহলে ভুল করছেন। এই গণতন্ত্রের জন্য ১৯৫২ সাল থেকে এ দেশের রাজনীতিবিদেরা অনেক কষ্ট, ত্যাগস্বীকার করেছেন, কারাগারে গেছেন এবং নিহতও হয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই নির্যাতন আরও বেড়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য সেই প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে গণমাধ্যমের ওপরে পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র কখনো সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না, যদি একটি শক্তিশালী, মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম না থাকে। দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র স্বাধীন করতে পারিনি এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও আমরা অর্জন করতে পারিনি। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ, দেশে গণতন্ত্র না থাকলে সংবাদমাধ্যমেও স্বাধীনতা থাকবে না।’

বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ, এম আবদুল্লাহ, কামাল উদ্দিন সবুজ, কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।