রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে চালকেরা ভুয়া ঠিকানায় নিবন্ধন করছেন

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন। ছবি: বাসস
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন। ছবি: বাসস

অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোতে চালকেরা ভুয়া ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখতে পুলিশের পক্ষ থেকে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

আজ রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

বিপ্লব কুমার জানান, দুর্ঘটনায় যদি রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর কোনো ধরনের গাফিলতি থাকে এবং তদন্তে যদি তার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহত হওয়ার পর উবারচালক সুমনকে ২৬ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল শনিবার কাভার্ড ভ্যানের চালক আবদুর রহমানকে আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিপ্লব কুমার বলেন, ফাহমিদাকে নিয়ে চালক বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কাছাকাছি পৌঁছালে পেছন থেকে কাভার্ড ভ্যান মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এ সময় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যান ফাহমিদা। তাঁর (ফাহমিদা) ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যান কাভার্ড ভ্যানের চালক। পথচারী ও মোটরসাইকেলের চালক ফাহমিদাকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, হাসপাতালে মোটরসাইকেলের চালক সুমন যে ঠিকানা দিয়েছিলেন সেই ঠিকানা ভুয়া। এই ঠিকানায় তাঁকে পাওয়া যায়নি। উবারে নিবন্ধনের জন্য সুমন যে ঠিকানা দিয়েছেন, তা-ও ভুয়া। তাই তাঁকে কোথাও পাওয়া যায়নি। উবারে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে রাইডার নিবন্ধন করে সড়কে বাইক চালানোর অনুমতি পায়। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো কোনোও যাচাই-বাছাই ছাড়াই চালকদের অনুমতি দিচ্ছে। তিনি বলেন, সুমন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করায় তাকে খুঁজে পেতে পুলিশের সময় লেগেছে।

ঘটনার পর কাভার্ড ভ্যানসহ চালক আবদুর রহমান পালিয়ে যান উল্লেখ করে বিপ্লব কুমার বলেন, সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলেও সেগুলো স্পষ্ট ছিল না। তাই কাভার্ড ভ্যানটি শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে একটি সিসি ক্যামেরায় কাভার্ড ভ্যানের গায়ে লেখা কোম্পানির নাম দেখে চালককে শনাক্ত করা হয়। এরপর আশুলিয়া থেকে তাঁকে (চালক) গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে ফাহমিদাকে বহনকারী একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া গতির কাভার্ড ভ্যানটি। এ সময় মোটরসাইকেলের চালক বাঁ দিকে ও ফাহমিদা ডানদিকের সড়কে পড়ে যান। দ্রুতগতির কাভার্ড ভ্যানটি ফাহমিদাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পরে ফাহমিদাকে উদ্ধার করে পাশের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফাহমিদা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার দিন শ্যামলীর বাসা থেকে মহাখালীতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন তিনি।