পুলিশের অস্ত্র চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবক 'ক্রসফায়ারে' নিহত

পুলিশ সদস্যের হেফাজত থেকে চুরি হওয়া এসএমজি রাইফেলটি গতকাল শনিবার উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ শরিফুল বিশ্বাসকে (অস্ত্র হাতে) গ্রেপ্তার করে। ছবিটি গতকাল তোলা। ছবি: মাগুরা প্রতিনিধি
পুলিশ সদস্যের হেফাজত থেকে চুরি হওয়া এসএমজি রাইফেলটি গতকাল শনিবার উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ শরিফুল বিশ্বাসকে (অস্ত্র হাতে) গ্রেপ্তার করে। ছবিটি গতকাল তোলা। ছবি: মাগুরা প্রতিনিধি

মাগুরায় পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া শরিফুল বিশ্বাস ওরফে রাজিব ওরফে রাজু (২৮) ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন।
আজ রোববার ভোররাত পৌনে তিনটার দিকে মাগুরার শালিখা উপজেলার গোবরা পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ রাজু নিহত হন বলে দাবি করেছে পুলিশ।নিহত ব্যক্তি গোবরা গ্রাম-সংলগ্ন হরিশপুর গ্রামের জলিল বিশ্বাসের ছেলে।
দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে গোবরা পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া পুলিশের হেফাজত থেকে একটি এসএমজি রাইফেল চুরি হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে অস্ত্রটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শরিফুলকে আটক করে পরে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
ওই ভোটকেন্দ্রে পুলিশের তিন কনস্টেবল ও ১২ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁদের কাছে মোট পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ওই রাতে ভোটকেন্দ্রের একটি কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় এসএমজিটি চুরি হয়। সকালে অস্ত্র চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। অস্ত্রটি সাইদুর রহমান নামে এক পুলিশ সদস্যের হেফাজতে ছিল।
ওই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শালিখার হাজরাহাটি পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল সাইদুর রহমান এবং খুলনা রিজার্ভ (আরআরএফ) পুলিশের কনস্টেবল রায়হান সর্দার ও মওদুদ আহমেদ নামে তিন পুলিশ কনস্টেবলকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। পরে পুলিশ অস্ত্রটি উদ্ধারে চিরুনি অভিযান শুরু করে।
গতকাল শনিবার দুপুরে শালিখার হরিশপুর গ্রাম থেকে শরিফুল বিশ্বাস ওরফে রাজিব ওরফে রাজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই গ্রামের একটি বাগান থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। আজ ভোররাতে গোবরা পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পাশে পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ রাজু নিহত হন।
শালিখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথের ভাষ্য, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ রাজু নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর অধিকাংশই যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর থানার। পুলিশের চুরি হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধারের পর তাঁর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আরও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য রাত পৌনে তিনটার দিকে শালিখার গোবরা পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ। সেখানে ওঁত্ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় দৌড়ে পালাতে গিয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ রাজু গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করার পর তিনি মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি দোনলা বন্দুক, ছয়টি তাজা গুলি, তিনটি ধারালো অস্ত্র, ছয় জোড়া স্যান্ডেলসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় ওসি বিপ্লব কুমার নাথ, ওসি (তদন্ত) কাজী কামাল হোসেন, উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. নাঈম, কনস্টেবল আরজ আলী ও ওবায়দুর রহমান আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মাগুরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ রাত তিনটার দিকে মাথার পেছনের দিকে গুলিবিদ্ধ ও মৃত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা বা চিকিত্সা দেওয়া হয়নি।