ভ্রূণ স্থানান্তর করে ঘোড়ার উন্নত জাত

ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে ১০ এপ্রিল জাপানে জন্ম নেওয়া ঘোড়া-শাবক। সঙ্গে বিজ্ঞানী এম এ হান্নান।  ছবি: সংগৃহীত
ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে ১০ এপ্রিল জাপানে জন্ম নেওয়া ঘোড়া-শাবক। সঙ্গে বিজ্ঞানী এম এ হান্নান। ছবি: সংগৃহীত

জাপানে প্রথমবারের মতো ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘোড়ার বাচ্চা প্রসব করানো হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানী এম এ হান্নান। গবেষণায় ইউরোপীয় একটি ঘোড়ার শুক্রাণু দিয়ে জাপানি মাদি ঘোড়ার (ঘুড়ি) কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়। সেখান থেকে ভ্রূণ সংগ্রহ করে অন্য একটি ঘুড়ির গর্ভে তা রাখা হয়। ১০ এপ্রিল ঘুড়িটি একটি সুস্থ বাচ্চা প্রসব করেছে।

এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে উন্নত জাতের গরু, মহিষ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

জাপানের অবিহিরো ইউনিভার্সিটি অব অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াসুও নামবোর তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি হয়েছে। গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিক জার্নাল দ্য জার্নাল অব ভেটেরিনারি মেডিসিন সায়েন্স-এ প্রকাশিত হয়েছে। জাপানের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকেও এ-সংক্রান্ত খবর ছাপা হয়েছে। তিন বছর ধরে এ প্রযুক্তিতে ঘোড়ার প্রজনন নিয়ে গবেষণা হচ্ছিল। কিন্তু গর্ভে থাকা অবস্থায় এক থেকে আড়াই মাসের মধ্যে বাচ্চা মারা যেত। এই প্রথম একটি ঘুড়ি সুস্থ বাচ্চা প্রসব করল।

বিজ্ঞানী এম এ হান্নান এখন জাপানে। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে জাপানে ঘোড়ার যে প্রজনন আমরা করেছি, তা বাংলাদেশে গরুর ক্ষেত্রে আমি করতে চাই। বাংলাদেশে উন্নত মানের গরুর সংকট আছে। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে উন্নত জাতের বেশি মাংস ও দুধ দিতে পারে, এমন গরুর উৎপাদন সম্ভব। আমি এক বছরের মধ্যে দেশে ফিরে আসছি, বাংলাদেশ গরু ও মহিষের এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা যাবে।’

এম এ হান্নান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যৌথ প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে তিনি জাপানের ওসাকা প্রিফেকচার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং বাংলাদেশে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষা ছুটিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক হিসেবে জাপানে কর্মরত।

জাপানে ওই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রযুক্তিতে বাচ্চা উৎপাদনে বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে একটি গরু, ঘোড়া বা মহিষ থেকে বছরে একটি বাছুর জন্ম নেয়। কিন্তু ভ্রূণ স্থানান্তর প্রযুক্তিতে প্রতিবছর একই গাভির অনেকগুলো বাছুর পাওয়া সম্ভব।

এম এ হান্নানের ওই গবেষণার জন্য ইউরোপ থেকে ‘আইরিশ কনেমারা পনি’ জাতের মদ্দা ঘোড়ার হিমায়িত সিমেন আমদানি করা হয়। ওই সিমেন জাপানি ‘হোক্কাইডো পনি’ জাতের ঘুড়িকে কৃত্রিম প্রজনন করা হয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের শল্য ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদা ইয়াসমিন বারী বলেন, দেশের গরুর জাত উন্নত করা ও উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার বড় ধরনের সাফল্য আনতে পারবে।