ফাহমিদা নিহত, উবারের দুঃখ প্রকাশ

ফাহমিদা হক লাবণ্য
ফাহমিদা হক লাবণ্য

সড়ক দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিবন্ধিত পরিবহনে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা প্রতিষ্ঠান উবার। উবার জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তে কাজ চলছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করতে উবার প্রস্তুত।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্যকে বহনকারী মোটরসাইকেল চালকের সব ধরনের পরিচয়পত্রে ভুল ঠিকানা দেওয়া ছিল। জাতীয় পরিচয়পত্র, অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা প্রতিষ্ঠান উবারের অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল নম্বরে চালু থাকা বিকাশ অ্যাকাউন্টে চালকের মূল তথ্য গোপন করা হয়েছিল।

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়েই চালকের নিবন্ধন পেয়েছিল সে। অন্যদিকে কাভার্ড ভ্যানের চালকের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ছিল ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের মামলা। ঘটনার দিন এই দুই পরিবহন বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ফাহমিদা শ্যামলীর বাসা থেকে উবারে করে খিলগাঁওয়ের ছায়াবীথি এলাকায় যাচ্ছিলেন। চালক বেপরোয়া গতিতে চালাচ্ছিল। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে এলে দ্রুতগতিতে আসা ইনফোর্ট (রেকর্ডস অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সলিউশন প্রোভাইডার) প্রতিষ্ঠানের একটি কাভার্ড ভ্যান পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। সে ধাক্কাতেই ফাহমিদা সড়কে পড়ে যান। ভ্যানটি তাঁকে চাপা দিয়ে আরও দ্রুতগতিতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পেছন দিয়ে বাণিজ্য মেলামুখী বিকল্প সড়ক দিয়ে তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানটির আঞ্চলিক কার্যালয়ে চলে যায়। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পরে কাভার্ড ভ্যানটির গায়ে লেখা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়।

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তেজগাঁওয়ে গিয়ে জানা যায়, আশুলিয়াতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়। গত শনিবার সেখানে গিয়ে প্রথমে চালক আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তার ও পরে ভ্যানটি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার ও আটক ব্যক্তিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে। এরপর দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, হাসপাতালে মোটরসাইকেলের চালক সুমন যে ঠিকানা দিয়েছিলেন, সেই ঠিকানা ভুয়া। এই ঠিকানায় তাঁকে পাওয়া যায়নি। উবারে নিবন্ধনের জন্য সুমন যে ঠিকানা দিয়েছেন, তা-ও ভুয়া। তাই তাঁকে কোথাও পাওয়া যায়নি। উবারে ভুয়া ঠিকানা দিয়ে রাইডার নিবন্ধন করে সড়কে বাইক চালানোর অনুমতি পায়। রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো কোনোও যাচাই-বাছাই ছাড়াই চালকদের অনুমতি দিচ্ছে। তিনি বলেন, সুমন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করায় তাকে খুঁজে পেতে পুলিশের সময় লেগেছে।

ঘটনার পর কাভার্ড ভ্যানসহ চালক আবদুর রহমান পালিয়ে যান উল্লেখ করে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেলেও সেগুলো স্পষ্ট ছিল না। তাই কাভার্ড ভ্যানটি শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে একটি সিসি ক্যামেরায় কাভার্ড ভ্যানের গায়ে লেখা কোম্পানির নাম দেখে চালককে শনাক্ত করা হয়। এরপর আশুলিয়া থেকে তাঁকে (চালক) গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে ফাহমিদাকে বহনকারী একটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া গতির কাভার্ড ভ্যানটি। এ সময় মোটরসাইকেলের চালক বাঁ দিকে ও ফাহমিদা ডানদিকের সড়কে পড়ে যান। দ্রুতগতির কাভার্ড ভ্যানটি ফাহমিদাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পরে ফাহমিদাকে উদ্ধার করে পাশের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফাহমিদা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি শ্যামলীর বাসা থেকে খিলগাঁওয়ের ছায়াবীথি এলাকায় যাচ্ছিলেন তিনি।

উবারের দুঃখ প্রকাশ
উবারের নিবন্ধিত পরিবহনে দুর্ঘটনা ঘটায় দুঃখ প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার বিকেলে উবারের বাংলাদেশি জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় বলা হয়, ‘এ ধরনের ঘটনা উবার কর্তৃপক্ষকে আহত করেছে, একই সঙ্গে আমরা নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ঘটনার তদন্তে কাজ করছে উবার। এ ছাড়া, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকেও সহযোগিতা করতে উবার প্রস্তুত আছে।’

দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ বলে, ঘটনার পর মোটরসাইকেলের চালকের বিষয়ে তথ্য চাইলে উবার কর্তৃপক্ষ অসহযোগিতা করে। তখনই এ বিষয়ে সাংবাদিকেরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা উবারের বাংলাদেশি জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক আরমানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তে যদি উবারের গাফিলতির কোনো প্রমাণ উঠে আসে তাহলে পুলিশ যেকোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।

ফাহমিদা নিহতের ঘটনায় করা মামলায় উবারচালক সুমনকে ২ দিন ও কাভার্ড ভ্যানের চালক আবদুর রহমানকে ৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।