জাতিসংঘ ভাসানচরের বিপক্ষে নয়: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস-বিস) মিলনায়তনে রোহিঙ্গা সমস্যা–বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ঢাকা, ২৮ এপ্রিল। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস-বিস) মিলনায়তনে রোহিঙ্গা সমস্যা–বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ঢাকা, ২৮ এপ্রিল। ছবি: সংগৃহীত

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের কোনো বিরোধিতা নেই। আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস–বিস) মিলনায়তনে রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) ‘রোহিঙ্গা সমস্যা: দৃশ্যমান সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘জাতিসংঘের তিন সংস্থার প্রধানদের সফরের পর এটা বলতে পারি, জাতিসংঘ ভাসানচরের বিপক্ষে নয়। আমরা বিশ্বাস করি না জাতিসংঘের কেউ ভাসানচরের বিরুদ্ধে।’

বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের গাদাগাদি করে অবস্থানের অবসানে সরকারের প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাই। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা ইতিবাচকভাবে যুক্ত থাকতে চাই।’

ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতাই যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। তাঁর মতে, শুধু এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে থেমে থাকলেই চলবে না। যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আসতে হবে।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে নজর রাখতে হবে মিয়ানমারের ওপর। তা ছাড়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হওয়ায়, সমস্যাটি আর দ্বিপক্ষীয় নেই। এটি আন্তর্জাতিক হয়ে গেছে। তা ছাড়া সমস্যা সমাধানে দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই মিয়ানমারের সঙ্গে দর–কষাকষির সময় বাংলাদেশের শরীরী ভাষায় পরিবর্তন আনতে হবে। সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে আইসিসি ও আইসিজেতে যেতে হবে। এর পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন ও ভারত সফরে গিয়ে সে দেশের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ওনার প্রস্তাবে কিছু আছে যেগুলো সামনের দিনের কর্মপরিকল্পনায় ও পদ্ধতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে আমরা এ সমস্যাটার সমাধান করতে পারব। বর্তমান বিশ্বে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রই তাদের দেশের ১১ লাখ মানুষকে জুলুম নির্যাতন করে, অন্য দেশে পাঠিয়ে দিয়ে পার পেয়ে যাবে—এ অবস্থা বিশ্বে এখন আর নেই।’

প্রত্যাবাসন থেকে নজর সরে যায়নি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর প্রধানদের সফর থেকে মনে করার কারণ নেই যে, প্রত্যাবাসনে কাজ হচ্ছে না। এ সমস্যায় নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের দ্বিধাবিভক্তি নিয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চীন ও রাশিয়াকে আমরা যেভাবে চাই, সেভাবে এখনো আমরা তাদের পাইনি। কাজেই এটা এখনো একটি প্রসঙ্গ। তারপরও এ সমস্যাটিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নিয়ে পরের ধাপে যেতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে ফিরে যাওয়াটাই হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য একমাত্র সমাধান। শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, তারা ফিরে যেতে চায়। তারা টেকসই উপায়ে ফিরে যেতে চায়। তারা মিয়ানমারের কাছ থেকে সিগন্যাল পেতে চায় মৌলিক বিষয়ে।’

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। ডিকাব সভাপতি রাহীদ এজাজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব।