অপবাদ সইতে না পেরে জীবনই দিলেন মেয়েটি

তানিয়া বেগম
তানিয়া বেগম

ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অপবাদ দিয়ে সারা রাত তানিয়া বেগম (২৪) নামের এক কলেজছাত্রীর ঘরের চালায় ঢিল ছোড়েন গ্রামবাসী। সকালে এসে গ্রামবাসী তাঁকে দিয়ে যান নানা অপবাদ। এই অপবাদ দিয়ে গ্রামবাসী ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই নিজ ঘরে পাওয়া যায় তাঁর ঝুলন্ত লাশ।

তানিয়ার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, গ্রামের কিছু মানুষের দেওয়া অপবাদের মানসিক চাপ সইতে না পেরে তানিয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের মধ্যেরচর গ্রামে। তানিয়া ওই গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এ ঘটনায় গতকাল রোববার তানিয়ার বাবা মিলন মীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে আটজনকে। এর মধ্যে তানিয়ার প্রেমিক মিজানুর রহমান ও মিজানুরের মা হেলেনা বেগম, বোন রূপালী বেগম রয়েছেন। অন্য অভিযুক্তরা হলেন শাহ আলম, নুর আলম সরকার, ফিরোজ, চায়না বেগম ও ফরিদা বেগম। তাঁরা তানিয়ার প্রতিবেশী। মামলা হওয়ার পর গতকাল দুপুরে পুলিশ মধ্যেরচর গ্রাম থেকে জিহাদ মিয়া ও সানোয়ার মিয়া নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছে। তবে এজাহারে জিহান ও সানোয়ারের নাম নেই।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পড়াশোনার পাশাপাশি তানিয়াপৌর স্টেডিয়ামসংলগ্ন সাজেদা আলম নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। মিজানুর রহমানও একই হাসপাতালে কর্মরত। মিজানুর উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের শ্রীনগর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত শুক্রবার রাতে তানিয়ার বাড়িতে মিজানুর এসে দেখা করেন। গ্রামের কিছু মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে মিজানুরকে আটকে রাখেন এবং তানিয়াকে তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ে করতে চাপ দেন। কিন্তু মিজানুর এতে রাজি হননি। ঘটনার রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় তানিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর সামাজিক অত্যাচার। রাতব্যাপী বিরতিহীন ঢিল ছোড়া হয় তানিয়াদের বাড়িতে। সকালে এসে গ্রামবাসী নানা অপবাদ দিতে থাকেন। কেউ কেউ বিষপান করে বা গলায় ফাঁস নিয়ে মেয়েটিকে আত্মহত্যা করারও কথা বলেন। এর কিছুক্ষণ পর নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তানিয়া।

গতকাল দুপুরে মধ্যেরচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তানিয়ার মা বিলাপ করছেন। আর বলছেন, ‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে গ্রামের মানুষের আবদার রেখেছে।’

তানিয়ার বাবা মিলন মীর বলেন, ‘আর যা–ই হোক আমার মেয়ে আত্মহত্যা করত না। অপবাদ সহ্য করতে পারে নাই বলেই আত্মহত্যা করেছে।’

এদিকে পুলিশ সকাল থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ধরতে গ্রামে অভিযান পরিচালনা করছে। দুজনকে আটক করলেও এজাহারভুক্ত কাউকে ধরতে পারেনি।

আটক হওয়া জিহাদ ও সানোয়ার নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, তাঁরা এই ঘটনার আগেও ছিলেন না, পেছনেও নেই।

মুঠোফোনে মিজানুর রহমান বলেন, তানিয়ার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং একজন অপরজনকে বিয়ে করার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। সব স্বপ্নের মৃত্যু ঘটিয়েছেন গ্রামের কিছু অতি উৎসাহী মানুষ।

অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত শাহ আলম জানান, তাঁরা তানিয়ার নিকট প্রতিবেশী। পূর্বশত্রুতার জের ধরে সুযোগ বুঝে তাঁদের আসামি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল আলম খান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জিহাদ ও সানোয়ারকে আটক করা হয়েছে।