শেষ সময়ে বিএনপির সাংসদেরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে

বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় নেতা—মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হারুন উর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান।
বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় নেতা—মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, হারুন উর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান।

বিএনপির পাঁচ সাংসদকে আজ ২৯ এপ্রিল সোমবারের মধ্যে শপথ নিতে হবে। অন্যথায় তাঁদের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে।

সংবিধানে বলা আছে, সংসদের প্রথম বৈঠকের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত সাংসদদের শপথ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সদস্যপদ বাতিল করে আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক বসে গত ৩০ জানুয়ারি। এই হিসাবে ২৯ এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচিতদের শপথ নিতে হবে।

বিএনপির নির্বাচিত সাংসদদের অনেকেই শপথ নিতে আগ্রহী। কিন্তু জাহিদুর রহমান শপথ নেওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তৎপরতার কারণে অন্যরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির নেতারা চেষ্টা করছেন নির্বাচিত সাংসদদের বুঝিয়ে শপথ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে। এরপরও যাঁরা শপথ নেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার জাহিদুর রহমানের শপথ নেওয়ার পর বিএনপির আর পাঁচ সাংসদ বাকি আছেন। এর মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাদে অন্যদের সংসদে যোগ দেওয়ার জোর গুঞ্জন আছে। তাঁরা হলেন: আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), মো. হারুনুর রশীদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), উকিল আবদুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) ও মো. মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪ আসন)।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলের চার সাংসদের সঙ্গে কথা বলতে একাধিক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও কারও কারও সঙ্গে কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

বিএনপির সাংসদ আমিনুল ইসলাম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাই, অনেক মানসিক চাপে আছি। আমি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।’

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, সাংসদদের শপথ নিতে সরকারের বিভিন্ন মহলের চাপ আছে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক হয়রানি থেকে মুক্তির পাশাপাশি ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার টোপও রয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘এটা সত্য, অনেকের কথায় সংসদে যাওয়ার আভাস আছে। তাঁরা শেষ পর্যন্ত লোভ-লালসা কতটা উপেক্ষা করতে পারবেন জানি না। তবে ন্যূনতম নীতিনৈতিকতা এবং মানুষের ঘৃণা ও নিন্দার কথা ভাবলে অবশ্যই চিন্তার পরিবর্তন হবে।’

সাংসদ আমিনুল ইসলাম ও হারুনুর রশীদ আজ সোমবার শপথ নিতে পারেন বলে আলোচনা আছে। এর মধ্যে হারুনুর রশীদ বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব পদে আছেন। কয়েক দিন ধরে তাঁকে নিয়েই নেতা-কর্মীদের বেশি হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

পুরোনো নেতা উকিল আবদুস সাত্তারের ভূমিকা কী হয়, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা আছে। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘যাতে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি, সে জন্য দোয়া করবেন।’

গতকাল রাতে তিন সাংসদ উকিল আবদুস সাত্তার, হারুনুর রশীদ ও আমিনুল ইসলামকে নিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

দলীয় সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের চেয়ারপারসনের কারাবন্দী অবস্থায় ওই তিনজনকে শপথ না নিতে অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে তিন সাংসদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্কাইপে পৃথকভাবে একান্তে কথা বলেন।

বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তেই আছি।’ আর হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বৈঠকে কিছুই হয়নি। কাল (আজ সোমবার) পর্যন্ত কী হয় দেখা যাক।’