সাদুল্যাপুরে পাতকুয়ার সুফল পাচ্ছে কৃষক

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের হিংগারপাড়া গ্রামে স্থাপিত পাতকুয়া।  প্রথম আলো
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের হিংগারপাড়া গ্রামে স্থাপিত পাতকুয়া। প্রথম আলো

আবেদ আলী (৫০) একজন প্রান্তিক কৃষক। বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের হিংগারপাড়া গ্রামে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দুই বিঘা জমিতে সবজি চাষ করে তাঁর সংসার চলে। এই সবজি চাষে সেচ দেওয়া নিয়ে তিনি সমস্যায় পড়তেন। এখন তিনি বিনা মূল্যে পাতকুয়া থেকে জমিতে পানি সেচ দিতে পারছেন।

আবেদ আলী বলেন, আগে শ্যালোমেশিন থেকে জমিতে পানি সেচ দিতে ঘণ্টাপ্রতি ১০০ টাকা খরচ হতো। এখন ইচ্ছেমতো বিনা পয়সায় সবজিখেতে পানি সেচ দিতে পারছেন। আবেদ আলীর মতো হিংগারপাড়া গ্রামের প্রায় ৫০ জন কৃষক এই পাতকুয়ার সুফল পাচ্ছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এ পাতকুয়া নির্মাণ করেছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাদুল্যাপুর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ধাপেরহাট ইউনিয়নের হিংগারপাড়া ও উত্তরপাড়ায় দুটি পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়। এগুলো সৌর প্যানেলযুক্ত। পানির অপচয় রোধ করা এবং যেসব এলাকায় পানির সংকট রয়েছে, সেসব এলাকায় এই পাতকুয়া স্থাপন করা হয়েছে। বিশেষত সবজি, রবিশস্য আবাদ করা হয়—এমন এলাকায় এই পাতকুয়া ব্যবহৃত হচ্ছে। হিংগারপাড়া ও উত্তরপাড়া গ্রামের দুটি পাতকুয়া থেকে প্রায় ২০ একর জমিতে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। ওই দুটি পাতকুয়া স্থাপনে খরচ হয় প্রায় ৩৬ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, পাতকুয়াগুলো চালানো হচ্ছে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে। ফলে বাইরে থেকে বিদ্যুৎ লাগছে না। একটি পাতকুয়ার প্রস্থ (ব্যাস) প্রায় ৪ দশমিক ৬৭ ফুট ও গভীরতা ১২২ ফুট। পাতকুয়ার ওপরে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের ছাতা নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে ৩ হাজার ৬০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্যানেল। তা দিয়ে চালানো হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমারসিবল মোটর।

এই পানি পাশের ১৮ ফুট ওপরে স্থাপিত তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতার ট্যাংকিতে তোলা হচ্ছে। উত্তোলিত ওই পানি পাইপের মাধ্যমে ৫০০ মিটার দূরে সরবরাহ করা হচ্ছে। পাইপগুলো মাটির নিচ দিয়ে বসানো। ওই পাইপের সাতটি স্থানে কল স্থাপন করা হয়েছে। পাতকুয়া পরিচালনার জন্য কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয়েছে কমিটি। এই পাতকুয়া উদ্ভাবন করেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।

২০ এপ্রিল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকার কৃষকেরা ভুট্টা, লাউ, শিম, রসুন ও কচুখেতে পাতকুয়ার পানি সেচ দিচ্ছেন। কয়েকজন কলে পাইপ লাগিয়ে তাঁদের জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এ ছাড়া গৃহস্থালির কাজের জন্য কয়েকজন গৃহিণীকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেল।

হিংগারপাড়া গ্রামের কৃষক এমাজ আলী বলেন, ঘণ্টায় ১০০ টাকা হিসেবে রবি ফসলের জমিতে পানি সেচ দিতাম। এতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ত। কিন্তু এলাকায় পাতকুয়া স্থাপন করায় উৎপাদন খরচ কমায় তাঁদের আয় বেড়েছে।