প্রায় চার বছর পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

চট্টগ্রাম বন্দরে কোকেন জব্দ করার ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা এই আদেশ দেন। ২০১৫ সালের জুন মাসে কোকেন জব্দ করার ঘটনা ঘটে।

আসামিরা হলেন লন্ডনপ্রবাসী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজারের বকুল মিয়া, চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, মোস্তাক আহমেদ। নূর মোহাম্মদ জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। অন্য তিনজন ঘটনার পর থেকে পলাতক। জামিনে রয়েছেন কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী আলম, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল আলম, আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। কারাগারে রয়েছেন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা ও পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান।

চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কোকেন জব্দের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। হাজির আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবী নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বিরোধিতা করে বলা হয়, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, আসামিরা কোকেন পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হোক। পরে আদালত বিচার শুরুর আদেশ দেন।

সরকারি কৌঁসুলি বলেন, পৃথক দুটি ধারা থাকায় মাদক আইনে বিচার শুরু হয়েছে। আর চোরাচালান আইনের ধারায় আদালতের নির্দেশে র‍্যাব অধিকতর তদন্ত করছে। প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।

২০১৫ সালের ৬ জুন পুলিশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরপর ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। বলিভিয়া থেকে আসা চালানটির প্রতিটি ড্রামে ১৮৫ কেজি করে সূর্যমুখী তেল ছিল। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দুটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়।

এ চালান উরুগুয়ের মন্টিভিডিও থেকে জাহাজীকরণ করা হয়। পরে তা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এর আগে কখনোই বলিভিয়া থেকে সূর্যমুখী ভোজ্যতেল আমদানি করেনি। তা ছাড়া তরল কোকেনকে গুঁড়া বা পাউডার কোকেনে রূপান্তর করার মতো প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে নেই।

কোকেন জব্দের ঘটনায় চট্টগ্রামের বন্দর থানায় ২০১৫ সালের ২৭ জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। আসামি করা হয় চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদকে।

ঘটনার পাঁচ মাস পর চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ নূর মোহাম্মদকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। চালানের গন্তব্য অজানা, আন্তর্জাতিক চক্র শনাক্ত না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ নারাজি আবেদন করলে আদালত র‍্যাবকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু র‍্যাবের তদন্তেও চালানটির গন্তব্য বের করা সম্ভব হয়নি। র‍্যাব নূর মোহাম্মদসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আদালত তা গ্রহণ করেন।