উপাচার্যকে ৪৬ দিনের ছুটি রাষ্ট্রপতির

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হককে তাঁর মেয়াদপূর্তির একদিন আগ পর্যন্ত ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টানা ৩৫ দিনের আন্দোলনের মুখে অবশেষে এ সিদ্ধান্ত হলো। আজ সোমবার তাঁর এই ছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে ১১ এপ্রিল থেকে আগামী ২৬ মে পর্যন্ত তাঁর ৪৬ দিনের ছুটি মঞ্জুর করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হককে ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক প্রয়োজনে ১১ এপ্রিল থেকে ২৬ মে পর্যন্ত কয়েকটি শর্তে ছুটি মঞ্জুর করেছেন।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ট্রেজারার এ কে এম মাহবুব হাসান নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের চার বছর মেয়াদের শেষ কার্যদিবস হচ্ছে আগামী ২৭ মে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হাসিনুর রহমান আজ দুপুরে বলেন, ‘উপাচার্য দুই দফায় ছুটির আবেদন করেছিলেন। তা মঞ্জুর হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন আশা করি শিক্ষার্থীরা দ্রুত ক্লাসে ফিরে যাবে এবং পড়াশোনায় নিজেদের মনোনিবেশ করবে।’ এ লক্ষ্যে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

এদিকে উপাচার্যের অপসারণ অথবা পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে পাঠানোর দাবিতে আজ সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এরপর তাঁরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বেলা ২টার দিকে উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানোর খবর পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। তাঁরা এ সময় আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে মিষ্টি বিতরণ করেন।

গত বুধবার সকাল থেকে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে কয়েকজন শিক্ষকও যোগ দেন। শুক্রবার অনশন তিন দিনে গড়ালে বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. হানিফ ও বরিশাল মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্য অধ্যাপক মো. ইউনুস নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ওই দিন বিকেল সাড়ে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনস্থলে যান। তাঁরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের তিনদিনের জন্য অনশন স্থগিতের আহ্বান জানান। এতে সম্মত হয়ে শিক্ষার্থীরা শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁদের অনশন আজ সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। আজ বিকেলে এই তিন দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই উপাচার্যকে ছুটিতে পাঠানো হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৩৫ দিন ধরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আজ পূরণ হয়েছে। এ জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সফল হয়েছে। এ জন্য আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার না দেওয়ার প্রতিবাদে ওই দিন সকাল থেকেই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন বলে অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তা না মেনে ক্যাম্পাসে থেকেই আন্দোলন চালান শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠকে হলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই দিনই তা প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে অনড় থাকেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল ১৫ দিনের জন্য ছুটিতে যান উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর এই ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন।