কারা একাডেমির প্রাচীর বানানোর বলি সাড়ে পাঁচ শ গাছ

কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের জন্য রাজশাহীতে কেটে ফেলা হচ্ছে সাড়ে পাঁচ শতাধিক গাছ। ছবি: শহীদুল ইসলাম
কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের জন্য রাজশাহীতে কেটে ফেলা হচ্ছে সাড়ে পাঁচ শতাধিক গাছ। ছবি: শহীদুল ইসলাম

শতবর্ষী গাছটিতে তিন প্রজাতির টিয়াসহ বাস করত আরও অনেক রকমের পাখি। অথচ প্রাচীন এই গাছটির ডালপালা কেটে ফেলা হয়েছে, বাকি শুধু গোড়ায় কোপ দেওয়া। গাছটির প্রাণ বাঁচাতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। চেষ্টার পাশাপাশি জানাচ্ছেন প্রতিবাদও।

রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রাচীর নির্মাণের জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে এই শতবর্ষী গাছসহ অন্তত ৫৬১টি গাছ। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও গাছগুলোকে বাঁচানোর দাবিতে ‘গাছ ও পরিবেশের জন্য আমরা, পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়ন চাই না’ স্লোগানে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহীবাসী। মানববন্ধনের পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে গাছটির প্রাণভিক্ষা চাইতে ছুটে যান সবাই।

মানববন্ধনে অংশ নেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি তারেক অণু, পর্যটক তানভীর অপু, পাখি ও পরিবেশপ্রেমী তোজাম্মেল হকসহ আরও অনেকেই। তারেক অণু বলেন, গাছটি অনেক পাখির আশ্রয়স্থল। গাছটিতে এখনো প্রাণ আছে। ডালপালা কাটা হলেও গোড়া এখনো কাটা হয়নি। গাছটির প্রাণভিক্ষা চান তিনিসহ মানববন্ধনে উপস্থিত সবাই। তোজাম্মেল হক বলেন, দিঘাপতিয়ার রাজবাড়িতে একটি গাছকে বাঁচানোর জন্য প্রায় ১০০ বছর আগের নির্মাণ করা প্রাচীর একটু ঘুরিয়ে করা হয়েছে। চাইলে এই দৃষ্টান্ত এখানেও অনুসরণ করা যায়।

আজ সোমবার সকালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্ব পাশে সিপাইপাড়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় আকৃতির যে গাছগুলোতে পাখিরা বাসা বেঁধেছিল, সেই গাছগুলোই কাটা হচ্ছে। কারাগারের আগের প্রাচীর ঘেঁষে অবস্থিত কারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের গাছগুলোও কেটে ফেলা হয়েছে। রাস্তার পাশে থাকা রেইনট্রি, মেহগনি, তেঁতুলসহ বেশ কিছু বড় গাছ কেটে রাস্তার ওপরই ফেলে রাখা হয়েছে। কোনো কোনো গাছের ওপর উঠে ঠিকাদারের শ্রমিকেরা ডাল কেটে নামিয়ে দিচ্ছেন। গাছের নিচেই করাত দিয়ে আরেক দল শ্রমিক গাছের গুঁড়ি কেটে দুভাগ করছেন।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মিঠুন আলী সরদার বলেন, প্রাচীরটা একটু এদিক-ওদিক করলেই বহু গাছ বাঁচানো যেত। আরেক বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, সরকারিভাবে গাছ কাটা হচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজন কিছুই করতে পারছেন না।

গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার সুমন আলী বলেন, ‘গাছ নিলামে কিনেছি। কোনো কথা বলার থাকলে জেলখানায় গিয়ে বলেন। এখানে বিরক্ত করবেন না।’ ১৯ লাখ টাকায় সব গাছ কেনা হয়েছে বলে জানান শ্রমিকেরা।

এ বিষয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। জেলার হাবিবুর রহমান জানান, এখানে বাংলাদেশের একমাত্র কারা প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই সব ধরনের আইন মেনেই ৫৬১টি গাছ প্রায় ১৯ লাখ টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকায় একটা বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। এর গুরুত্ব অনেক বেশি। বড় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই গাছগুলো কাটতে হচ্ছে।

তবে রাজশাহীর সেভ দ্য নেচারের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রাচীর দু-তিন ফুট সরিয়ে দিলেই গাছগুলো রক্ষা করা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, এই গাছগুলো মানুষের বন্ধু, পাখিদের আশ্রয়স্থল। এত পুরোনো বড় বড় গাছ কেটে ফেলা কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না। একটা গাছ তৈরি হতে অনেক সময় লাগে।