কিশোরী, নবজাতক ও নির্মমতা

বাবা বেঁচে নেই। মায়ের কাঁধে সংসারের হাল। জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। বাড়িতে একা থাকে কিশোরী মেয়ে। তার ওপর কুদৃষ্টি পড়ে প্রতিবেশী যুবকের। নানাভাবে ফুসলিয়ে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণ করেন। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে কিশোরী। গর্ভপাত ঘটাতে উঠেপড়ে লাগেন। সফল হননি। তবে নবজাতক জন্ম নেওয়ার পর তাকে ফেলে আসেন নির্জন বনে।

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ায় রাস্তার পাশ থেকে নবজাতক উদ্ধারের ঘটনার কিনারা করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে এই কাহিনি। পুলিশ অরুণ কর (৩০) নামের ওই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, উদ্ধার হওয়া নবজাতকের হতদরিদ্র নানির বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে। তাঁর স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। বাড়িতে কিশোরী মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। মেয়েকে বাড়িতে রেখে প্রতিদিন কাজের সন্ধানে যান। এর সুযোগ নেন প্রতিবেশী যুবক অরুণ কর। পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক অরুণ দুই সন্তানের জনক। তিনি নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানার পর তার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা শুরু করেন অরুণ কর। তবে নানা কৌশল করেও তিনি সফল হননি। এ অবস্থায় ২৩ এপ্রিল ওই কিশোরী একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান জন্ম দেয়। তবে জন্মের পরপরই নবজাতককে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন অরুণ কর। তাকে নির্জন লাউয়াছড়া বনে ফেলে রেখে আসেন তিনি। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন এলাকার দুই ব্যক্তি।

ওই কিশোরীর মা বলেন, তাঁর নিরপরাধ মেয়ের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তার শাস্তি চান তিনি।

পুলিশ বলছে, তারা প্রথমে সূত্রের মাধ্যমে ওই নবজাতকের বাবা-মায়ের সন্ধান পায়। আর ওই কিশোরীর মা গত রোববার বিকেলে শ্রীমঙ্গল থানায় এসে পুলিশের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানান। তিনি বাদী হয়ে অরুণ করের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে কিশোরী মেয়েকে প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও নাতিনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন তিনি। পুলিশ মামলার পরপরই অরুণ করকে নিজ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে।

শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত অরুণ করকে গতকাল সোমবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। নবজাতকের বিষয়ে এখন আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত বুধবার সকালে কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের জানকিছড়া এলাকায় পড়ে ছিল নবজাতকটি। তা দেখে পুলিশকে খবর দেন সুদীপ্ত দে নামের এক তরুণ। পরে নবজাতককে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে প্রথমে ভর্তি করা হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে শিশুটিকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও আহমেদ ফয়সল জামান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে অনেক অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ তা বলা যায় না। তবে এখন সুস্থ হওয়ার পথে রয়েছে।