গরমে জীবন হাঁসফাঁস

বাসের জানালার পাশের আসনে বসা তৃষ্ণার্ত শিশুটি কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পথে পানি বিক্রেতার দিকে। গতকাল দুপুরে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে।  ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
বাসের জানালার পাশের আসনে বসা তৃষ্ণার্ত শিশুটি কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পথে পানি বিক্রেতার দিকে। গতকাল দুপুরে কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমীন
>

• গত কয়েক দিন টানা 
• অতিষ্ঠ রাজধানীর জনজীবন
• গতকাল ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৬.৩
• মৌসুমি রোগের প্রকোপ বেড়েছে

মাথার ওপর থেকে সূর্য তখন কিছুটা পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড আঁচে গা পুড়ে যায় যায় অবস্থা। বাসের জানালার পাশের আসনে বসা এক তৃষ্ণার্ত শিশু কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল পথে পানি বিক্রেতার দিকে। মা সন্তানের পিপাসা বুঝতে পেরে একটি পানির বোতল কিনে দেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে এই দৃশ্য দেখা যায়।

গত কয়েক দিনের টানা দাবদাহে অতিষ্ঠ রাজধানীর জনজীবন। গরমের তীব্রতায় ছোটবড় সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। বাসা থেকে বের হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রোদের খরতাপে অসহনীয় অবস্থায় পড়ছেন তাঁরা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে। যাঁরা ঘুরে ঘুরে পণ্য বিক্রি করেন, রোদের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে তাঁরা কম লাভে দ্রুত পণ্য বিক্রি করে বাসার পথ ধরছেন। পশ্চিম শেওড়াপাড়ার পীরেরবাগ রোডে এক ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রেতা মাঝারি আকারের শিং মাছ দেখিয়ে বলেন, ‘গরমে টিকতে পারছি না। সকালে পাঁচ শ টাকা দরে কেজি বিক্রি করেছি। এখন চার শ টাকায় দিয়ে শেষ করে বাসায় চলে যাব।’

গতকাল রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র মির্জা তানযীর পরীক্ষা শেষ করে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে মিরপুরের বাস ধরেন বেলা দেড়টায়। যানজট ঠেলে তিন ঘণ্টা পর তিনি বাসায় পৌঁছান। তানযীর বলেন, ‘একে প্রচণ্ড গরম, তার ওপর যানজট। বাসও যাত্রীতে ঠাসা। একসময় মনে হয়েছে অজ্ঞান হয়ে যাব। পরে বাস থেকে নেমে পানি কিনে হাতমুখে ঝাপটা দিই। তাতে কিছুটা রক্ষা।’ আর গরমের কারণে ঘেমে কাপড় ভিজে যাওয়ায় ঠান্ডা লাগে বলে জানান এই তরুণ।

বিভিন্ন বয়সী বেশ কয়েক ব্যক্তি জানান, সকালে সূর্যের আলো ফুটতেই গরম শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গরমের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অসহ্য গরম থাকে। হাওয়া–বাতাস নেই। সন্ধ্যার পর অস্বস্তিকর গুমট হয়ে ওঠে পরিবেশ, রাতেও ভ্যাপসা গরম। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। তাতে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘুমানো যায় না। কেউ কেউ বলেছেন দিনে কয়েকবার করে গোসল করেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। অনেকে আবার মেঝেতেও বিছানা পেতেছেন। নারী-শিশু-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মাত্রা অন্যদের তুলনায় বেশি।

মোহাম্মদপুরে কর্মস্থলে যেতে গরমের ধকল কমবে ভেবে বাংলামোটর থেকে বাসে না উঠে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নেন আশা মুনতাহা। তাতেও খুব বেশি স্বস্তি মেলেনি। এই নারী বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে বাসে ওঠার সাহস পাইনি। সিএনজিতে ভাড়া কয়েক গুণ বেশি গেলেও তেমন স্বস্তি মেলেনি। আর যানজটের কারণে জীবনটা একদম ওষ্ঠাগত।’

গতকাল দেখা গেছে দুপুর হতেই অলিগলিতে লোকজনের চলাফেরা কিছুটা কমে যায়। অনেকে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান।

বৈশাখের দাবদাহে রাজধানীবাসী দিনভর একদণ্ড শান্তি খুঁজেছেন শরবতের গ্লাসে, পানির বোতলে কিংবা শসার টুকরোতে। আবার টংঘরে চা খেতে এসেও অনেকে খুঁজেছেন খাবার স্যালাইন। ক্রেতাদের চাহিদার কারণে গতকাল কারওয়ান বাজারের একটি টংঘরে চকলেট, বিস্কুটের বয়ামের পাশে ঠাঁই পেয়েছে স্যালাইনের বয়াম। দোকানদার আবুল কালাম মোল্লা বলেন, ‘গরম বাড়ার পর থেকে কাস্টমার স্যালাইন খোঁজে। তাই রাখছি। ভালো চলে।’ আবার খামারবাড়ি মোড়ে এক রিকশাচালককে ২০ টাকা দিয়ে পানি কিনে মাথায় ঢালতে দেখা যায়।

এদিকে গরমের কারণে মৌসুমি রোগের প্রকোপও বেড়েছে। এর মধ্যে বমি, ডায়রিয়া ও জ্বরে ভুগছেন বেশির ভাগ লোক। ঢাকা শিশু হাসপাতালের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ কিংকর ঘোষ বলেন, জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা বেশি আসছে।