রাঙামাটির সঙ্গে ৭ উপজেলার লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় রাঙামাটি শহরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। মালিকেরা লঞ্চ ভিড়িয়ে রেখেছেন ঘাটে। সম্প্রতি রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারে।  সুপ্রিয় চাকমা
কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় রাঙামাটি শহরের সঙ্গে উপজেলাগুলোর নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। মালিকেরা লঞ্চ ভিড়িয়ে রেখেছেন ঘাটে। সম্প্রতি রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারে। সুপ্রিয় চাকমা

কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক মাত্রায় পানি কমে যাওয়ায় ও অসংখ্য চর জেগে ওঠায় রাঙামাটি জেলা শহরের সঙ্গে সাত উপজেলার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যাতায়াতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জেলার সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি লঞ্চযাত্রী। একই কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি তীব্র দাবদাহ ও হ্রদের তলদেশ ভরাট হওয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের পর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে ৬ উপজেলার নৌযোগাযোগ তৈরি হয়। সৃষ্টি হয় মাছের অভয়াশ্রম। সম্প্রতি হ্রদ ভরাট হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতব্যবস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও মাছের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। হ্রদটি এখন ধীরে ধীরে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিং না হওয়ায় তলদেশ ভরাট হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে জেগে উঠছে অসংখ্য চর। এ কারণে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের ৪ মাস লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

জানা গেছে, রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচরের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম নৌপথ। তবে কাপ্তাই উপজেলায় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা থাকলেও নৌপথেও যাতায়াত করা যায়। অন্য উপজেলার মধ্যে নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার খাগড়াছড়ি জেলা ঘুরে বিকল্প সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে। তবে সড়কপথে সময় বেশি লাগে, খরচও হয় বেশি।

কমছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট রয়েছে। এই ৫ ইউনিটে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সম্প্রতি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় মাত্র ২টি ইউনিট কোনো রকমে চলছে। এই ২ ইউনিটে মাত্র ৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে যেকোনো সময় এই ২ ইউনিটের একটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জলবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

হুমকিতে মাছ উৎপাদন

কর্ণফুলী, মাইনী, কাচালংসহ ৫টি নদী কাপ্তাই হ্রদের সঙ্গে যুক্ত। এসব নদীর বয়ে আনা পলিতে ভরাট হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ। এ কারণে মাছের অভয়াশ্রম কমে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে গভীর পানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হ্রদে ৭৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৬৭টি দেশীয় ও ৮টি বিদেশি মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে ৬ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরও ৬টি প্রজাতির মাছে বিলুপ্তির পথে। জেলেদের জালে এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে।

নৌ-যোগাযোগ ব্যাহত

গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাঙামাটি-বাঘাইছড়ি নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর চলতি এপ্রিল মাসের শুরুতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায় রাঙামাটি-জুরাছড়ি নৌপথে। অব্যাহতভাবে পানি কমতে থাকায় গত সপ্তাহে বরকল, নানিয়ারচর, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলার সঙ্গে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়। সর্বশেষ গত ১৯ এপ্রিল লংগদু উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শামসুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তীব্র দাবদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পলি জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর ৭৮ দশমিক ৯৯ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। কাপ্তাই হ্রদের রুল কার্ভ (সময়ভিত্তিক পানি ওঠা-নামার মাপ) অনুযায়ী থাকার কথা ছিল ৮৩ দশমিক ৪০ ফুট। বর্তমানে ৫টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ২টি ইউনিট চালু রয়েছে। তবে যেভাবে পানি কমে যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যে আরও এক ইউনিট বন্ধ হয়ে যাবে।

রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করা না হলে মাছের উৎপাদন আরও কমে আসবে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদের থেগামুখ পর্যন্ত সমীক্ষা করা হয়েছে। ড্রেজিং করা হলে নৌযোগাযোগ ও মাছের প্রজনন বাড়বে বলে তিনি জানান।