এক হত্যা দেখে ফেলায় হত্যা আরেকজনকে

বিরোধের জের ধরে ২০১৬ সালের ১৪ জুন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার প্রতাপপুর গ্রামের সৈয়দ জামাল হোসেনকে (৪৮) শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা দেখে ফেলায় ২৫ দিন পর বল্লভপুর ইসলামিয়া ইটভাটার দারোয়ান আবুল বাশারকে (৩৫) গলা কেটে হত্যা করা হয়।

ওই দুটি ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে একজন গত রোববার কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল সোমবার কুমিল্লা নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জেলা দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বীকারোক্তি দেওয়া আসামি হলেন বল্লভপুর গ্রামের মো. আনিস (৪৫)। গ্রেপ্তার আরেক আসামি হলেন আবদুস সহিদ (৪২)। তিনিও একই গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের জেলা ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ওসমান গণি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আনিস ও সহিদের সঙ্গে সৈয়দ জামাল হোসেনের পারিবারিক বিরোধ ছিল। এর জের ধরে জামালকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ইসলামিয়া ইটভাটার প্রায় ১৮০ ফুট দূরে জমির আইলের মধ্যে ফেলা হয়। ইটভাটার দারোয়ান বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার তা দেখে ফেলেন। তা খুনিরা টের পায়নি। হত্যার ঘটনায় জামালের দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিনা বেগম অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। জামালকে হত্যার ২৫ দিন পর ৯ জুলাই ইটভাটার ভেতরে অফিসকক্ষে বাশারকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাশারের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সদর দক্ষিণ মডেল থানার পুলিশ সৈয়দ জামাল হত্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে আসামি শনাক্ত করা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আদালতের বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সন্দেহভাজন হিসেবে আনিসকে গত শনিবার দুপুরে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরদিন তাঁকে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ ইরফানুল হক চৌধুরীর আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিচারক তা নথিবদ্ধ করেন।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আদালতে মো. আনিস বলেন, ২০১৬ সালের ৬ জুলাই আনিসের সঙ্গে বাশারের মারামারি হয়। তখন আনিসকে হুমকি দিয়ে বাশার বলেন, ‘তোরা যে জামালকে খুন করছস, তা আমি জানি।’ ২০১৬ সালের ৮ জুলাই আনিস ও সহিদসহ কয়েকজন বাশারকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত তিনটার দিকে অন্য তিনজন ইটভাটায় যান। পরে আনিস ও সহিদ সেখানে যান। বাশারের পা চেপে ধরেন আনিস। আরেকজন মাথা চেপে ধরেন। অন্য আরেকজন ছুরি দিয়ে বাশারকে হত্যা করেন। পরদিন বাশারের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।