কেন্দ্রে দুই পরীক্ষার্থীর মারামারি

একে অন্যের খাতা দেখাদেখি করা নিয়ে কেন্দ্রের ভেতরে মারামারি করেছেন এইচএসসির দুজন পরীক্ষার্থী। তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। কলেজের এক শিক্ষক ও প্রদর্শককে পরীক্ষা চলাকালীন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ওই দুই এইচএসসি পরীক্ষার্থী হলেন আলম মামুন ও শাকিল আহমেদ। দুজনই ধরমপাশা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার জনতা মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২ নম্বর কক্ষে তাঁদের মধ্যে মারামারি হয়। আজ পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের পরীক্ষা চলছিল।

পরীক্ষার হলে দায়িত্বে অবহেলার কারণে উপজেলার বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক জীবন চৌধুরী ও প্রদর্শক এ কে জাফিকে পরীক্ষা চলাকালীন সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু তালেব এ ব্যবস্থা নিয়েছেন।

ধরমপাশা জনতা মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ১০টা থেকে উপজেলার জনতা মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের পরীক্ষা শুরু হয়। ওই কেন্দ্রের ২ নম্বর কক্ষে শাকিল আহমেদ পেছনের বেঞ্চে ও আলম মামুন তাঁর সামনের বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পরীক্ষা চলাকালে খাতা দেখাদেখি নিয়ে একে অন্যকে কিলঘুষি মারেন। একপর্যায়ে কলম ও স্টিলের স্কেল দিয়ে একে অন্যকে আহত করেন।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু তালেব ও ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজুল ইসলাম দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। আহত দুজন পরীক্ষার্থীকে দ্রুত ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। ডান কানে গুরুতর আঘাত পাওয়ায় আল মামুনকে ধরমপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শাকিল আহমেদকে সাময়িক চিকিৎসা শেষে ধরমপাশা থানা-পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। এ ছাড়া আল মামুনকেও পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

জনতা মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রের ২ নম্বর কক্ষের দায়িত্বে থাকা বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক জীবন চৌধুরী বলেন, ‘দুজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শাকিল আহমেদ একটু বেশি বদমেজাজি। তাঁকে বারবার সতর্ক করেও কোনো লাভ হয়নি। আমি ও প্রদর্শক জাফি তখন কক্ষের মধ্যে শিঙাড়া খাচ্ছিলাম। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই শাকিল আহমেদ ও আল মামুন নামের ওই দুজন পরীক্ষার্থী একে অন্যকে কিলঘুষি মারেন এবং কলম ও স্কেল দিয়ে একে অন্যকে আঘাত করেন। পরে আমরা দুজন শিক্ষক ওই দুই পরীক্ষার্থীকে দুই দিকে সরিয়ে দিয়েছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রঞ্জন কিশোর চাকলাদার বলেন, দুজন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের ডান কানে চারটি সেলাই লেগেছে। আরেক শিক্ষার্থীর ডান হাতে আঘাত লেগেছে। ওই দুজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রসচিব ও ধরমপাশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল করিম বলেন, একে অন্যের খাতা দেখাকে কেন্দ্র করে দুজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এই কাণ্ডটি ঘটেছে। ভারপ্রাপ্ত ইউএনওকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ধরমপাশা থানার ওসি এজাজুল ইসলাম আজ বেলা আড়াইটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ভবিষ্যতে যাতে আর এমন ঘটনা না ঘটে এবং শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা হয়, সে জন্য ওই দুজন পরীক্ষার্থীর নিজ নিজ বাবার কাছ থেকে মুচলেকা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আহত ওই দুজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে আর এমনটি করবেন না বলে মৌখিকভাবে অঙ্গীকার করেছেন।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু তালেব দুজন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রভাষক জীবন চৌধুরী ও প্রদর্শক এ কে জাফিকে পরীক্ষাচলাকালীন সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।