নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনপদ নিয়ে সংস্কৃতি মেলা

নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা সভ্যতার কথা তুলে ধরতে এই আয়োজন রাজধানীর অরণি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন
নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা সভ্যতার কথা তুলে ধরতে এই আয়োজন রাজধানীর অরণি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন
ছবি, পোস্টার, দেয়ালিকা, বায়োস্কোপসহ বিভিন্ন আয়োজনে শিক্ষার্থীরা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন জনপদের সংস্কৃতির কথা। ছবি: সংগৃহীত
ছবি, পোস্টার, দেয়ালিকা, বায়োস্কোপসহ বিভিন্ন আয়োজনে শিক্ষার্থীরা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন জনপদের সংস্কৃতির কথা। ছবি: সংগৃহীত

নদীকে ঘিরে বিভিন্ন জনপদের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এ ধরনের কথা বই-পুস্তকে লেখা থাকে। শিক্ষার্থীরা তা মুখস্থ করে। তবে সিন্ধু সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতাসহ বিভিন্ন সভ্যতায় একবার ঘুরে আসতে পারলে মন্দ হতো না। রাজধানীর অরণি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছবি, পোস্টার, দেয়ালিকা, বায়োস্কোপসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সে কাজটিই করেছে।

আজ মঙ্গলবার দৃক গ্যালারিতে ঢুকে দর্শকেরা একবার সিন্ধু সভ্যতা, আবার হয়তো অন্য কোনো সভ্যতায় ঢুকে যাচ্ছিলেন। নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা কিছু জনপদের সংস্কৃতি নিয়ে অরণি বিদ্যালয় এ সংস্কৃতি মেলার আয়োজন করে। নদীদূষণের চিত্র তুলে ধরা বা নদীর গান গাওয়া সব আয়োজনেই শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। সার্বিক আয়োজনে সহায়তা করেন শিক্ষকেরা।

বিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা জানালেন, প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ সংস্কৃতি মেলার আয়োজন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। উদাহরণ হিসেবে জানালেন, নদীদূষণের ছবি তোলার জন্য প্রথমে শিক্ষার্থীদের জন্য ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার আশপাশের নদীর তীরে। সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ছবি তোলে। একইভাবে দেয়ালিকা তৈরি, মাটির জিনিসপত্র তৈরিসহ সব কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল। মেলায় বায়োস্কোপ চালানোর কাজটিও করে খুদে শিক্ষার্থীরাই। বায়োস্কোপে নদীর ইতিহাস বিবর্তনও তুলে ধরা হয়।

সকাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে অভিভাবকের সরব উপস্থিতি ছিল। একজন অভিভাবককে দেখা গেল, ছয় মাস বয়সী সন্তানকে নিয়েই হাজির হয়েছেন মেলায়। নানি, দাদি, দাদা, নানা কেউ বাদ নেই। বিশেষ করে নিজের সন্তানের বানানো বা আঁকা ছবির সামনে গিয়ে অভিভাবকেরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান। সেলফি বা দল ধরে ছবি তোলা তো ছিলই।

অভিভাবক শিমু ইসলামের ছেলে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। একই শ্রেণিতে তাঁর বোনের যমজ দুই ছেলেও পড়ে। এই অভিভাবক বললেন, ‘আমাদের বাচ্চারা আসলেই এত সুন্দর করে এ কঠিন বিষয়টি উপস্থাপন করেছে, তা এ মেলায় না এলে বুঝতেই পারতাম না।’

আয়োজনে সরব উপস্থিতি ছিল শিক্ষার্থীদের। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন
আয়োজনে সরব উপস্থিতি ছিল শিক্ষার্থীদের। ছবি: সাবরিনা ইয়াসমিন

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নীনা ভূইয়া জানালেন, নদী-সভ্যতা-সংস্কৃতির মতো বই-পুস্তকের কথাগুলোর সঙ্গে হাতে-কলমে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সভ্যতার সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি নদীদূষণসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কেও জানার সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের সচেতন করতে যথেষ্ট সহায়তা করবে।

শিক্ষক ইশরাত জাহান জানালেন, বিদ্যালয়টি বিজ্ঞানমেলাসহ নিয়মিত বিভিন্ন আয়োজন করে। এবার সংস্কৃতি মেলা করা হলো। নদীকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতির নানান দিক তুলে ধরা হয়েছে মেলায়।

মেলায় দর্শকদের বিভিন্ন আয়োজন দেখতে সহায়তার পাশাপাশি কাজও করছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
মেলায় দর্শকদের বিভিন্ন আয়োজন দেখতে সহায়তার পাশাপাশি কাজও করছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

মেলায় শিক্ষার্থীদের আঁকা বিভিন্ন ছবি প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিক্রিরও ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার্থীদের একজন শিক্ষার্থী প্রতিবেদকের কাছে এসে সে কথা জানিয়ে দিল। মেলায় আগত দর্শকদের জন্য একই মন্তব্য লেখার খাতা ছিল। যে শিক্ষার্থীর মন্তব্য নেওয়ার দায়িত্ব সে তার পাশ দিয়ে যাওয়া দর্শকদের বলছিল, মেলা কেমন লাগল একটু লিখে যান।

বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন যায়তুন সাইফ একেক শিক্ষার্থীর সামনে গিয়ে শিক্ষার্থী যে ছবি এঁকেছে বা যা বানিয়েছে তা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন। শিক্ষার্থীরা জানে তাদের এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, তাই চটপট উত্তর দিচ্ছিল।

মেলায় দর্শকদের বিভিন্ন আয়োজন দেখতে সহায়তা করার কাজও করে শিক্ষার্থীরাই, তারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করে। সব মিলে মেলাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী-বিদ্যালয়ের সহায়তাকারী মামা-খালারা ছিলেন মহাব্যস্ত।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্থপতি, নকশাবিদসহ বিভিন্ন পেশা–শ্রেণির প্রতিনিধিদের মধ্যে নাহাস খলিল, সরিফ জামিল, তানজিম ওয়াহাব, মফিদুল হক, দেবাশীষ বিশ্বাস, আরিফুর রহমান, ক্যাথরিনা স্ট্রেবেল, অসীম দত্ত প্রমুখ সংস্কৃতি মেলা ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেন।