শ্রমিক হিসেবে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ নামে ৩০ হাজার একর জায়গাজুড়ে দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজীতে। এই শিল্পনগরের সিংহভাগ জায়গা মিরসরাই উপজেলায় হওয়ায় এখন মূল উন্নয়নকাজ চলছে এখানে। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, বাঁধ নির্মাণ ও ভূমি ভরাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির কাজ করছেন দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক। স্বল্প মজুরিতে কাজ করানো যায় বলে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারদের মাধ্যমে এই শিল্পাঞ্চলে ঢুকে পড়ছেন রোহিঙ্গা শ্রমিকেরা।

গত রোব ও সোমবার সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজন, ঠিকাদার ও কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অর্থনৈতিক অঞ্চলের মিরসরাই অংশের ইছাখালী ইউনিয়নের ডাবরখালী খালের দুই পাশে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) থেকে নেওয়া বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) ১ হাজার ১৫০ একর ভূমির উন্নয়নকাজ চলছে। মাটি ভরাট করতে সেখানে এখন উপকূলীয় বনের একটি অংশ কাটা হচ্ছে।

বন বিভাগ থেকে ২ কোটি টাকায় নেওয়া সেই বনাঞ্চল দরপত্রের মাধ্যমে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। সেই প্রতিষ্ঠান আবার গাছ কাটার কাজ ভাগ করে বিক্রি করছে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। এসব ব্যক্তি বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যুক্ত করছেন গাছকাটার কাজে।

সোমবার রাত নয়টায় মিরসরাইয়ের ডাবরখালী স্লুইসগেট এলাকায় একটি টিনশেড ঘরে কথা হয় নুরহাজ, মাহতাব, রুস্তম আলী, আবদুল হামিদ ও সেলিমসহ নয়জন রোহিঙ্গা শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁদের গাছ কাটানোর কাজ লাগান নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর এলাকার যুবক মো. রুবেল। তিনি কাজ করেন স্থানীয় মো. খোকনের অধীনে। খোকন আবার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মোহাম্মদ ইউনুছের কাজ করেন। ইউনুছ বেপজা থেকে গাছ কেনা হামিদুর রহমানের ক্রেতা।

মো. রুবেলের কাছে থাকা রোহিঙ্গা শ্রমিক দলের নেতা আবদুল হামিদ বলেন, কক্সবাজারের চকরিয়া বাজারে বাংলাদেশে আসা নতুন ও পুরোনো অনেক রোহিঙ্গা কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। সেখান থেকে তাঁদের আনা হয়েছে। প্রতি মণ গাছ কেটে গাড়িতে তোলা পর্যন্ত ২৮ থেকে ৩০ টাকা পান তাঁরা।

রোববার সকালে ইছাখালী স্লুইসগেট এলাকায় কথা হয় শরণার্থীশিবির থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ইসমাইলের (৪৫) সঙ্গে।

তিনি বলেন, দুই বছর আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। এত দিন কক্সবাজারের একটি শরণার্থীশিবিরে ছিলেন। কিছুদিন আগে কাজের উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ত্যাগ করেন। চকরিয়া বাজারে এলে আবদুল হাকিমের মাধ্যমে এখানে কাজ করতে আসেন।

 জানতে চাইলে বেপজা থেকে দরপত্রের মাধ্যমে গাছ কিনে নেওয়া চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে গাছ কাটার কাজে ৫০-৬০ জন রোহিঙ্গা শ্রমিক ঢুকেছিল। জানতে পেরে আমি সবাইকে বের করে দিয়েছিলাম। এখন কোনো রোহিঙ্গা শ্রমিক আছে বলে আমার জানা নেই। যদি থাকে তাহলে তাদেরও বের করে দেওয়া হবে।’

 মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক ব্যক্তি আমাকে মৌখিকভাবে রোহিঙ্গাদের কথা জানিয়েছে। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানও মাসিক সমন্বয় সভায় এ বিষয়টি তুলেছেন। অভিযোগ পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছি। কিন্তু কোনো রোহিঙ্গা শনাক্ত করা যায়নি। এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানা-পুলিশকে জানানো হয়েছে। আটক করতে পারলে তাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হবে।’