ছুটির মে দিবস, কাজের মে দিবস

দাবদাহের মধ্যে ইটভাটায় কাজ করছেন এক দিনমজুর। আশুলিয়া, সাম্প্রতিক ছবি। ছবি: হাসান রাজা
দাবদাহের মধ্যে ইটভাটায় কাজ করছেন এক দিনমজুর। আশুলিয়া, সাম্প্রতিক ছবি। ছবি: হাসান রাজা

মহান মে দিবস আজ বুধবার। শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি জানাতে দেশে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ উপলক্ষে আজ দেশে সরকারি ছুটি। শ্রমিক দিবসে বিশ্বের অন্তত ৮০টি দেশে সরকারি ছুটি থাকে।

মে দিবস, শ্রমিক দিবস বা বিশ্ব শ্রমিক দিবস—যে নামেই ডাকা হোক না কেন, দিনটি বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান-সংহতি জানানোর দিন হিসেবেই পালিত হয়ে আসছে ১৯০৪ সাল থেকে।

১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শ্রমিকেরা দৈনিক শ্রমঘণ্টা ১২ থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টা করার দাবিতে একটি ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। মে মাসের ৪ তারিখ শিকাগো শহরের হে মার্কেট স্কয়ারে পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অজ্ঞাতনামা কেউ বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যু হয়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে অনেক শ্রমিক নিহত হন। পরের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমেরিকান সরকার শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার দাবি পূরণ, শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনাকে স্মরণ এবং তাঁদের প্রতি সংহতি জানাতে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ৮০টি দেশে এই দিন জাতীয়ভাবে ছুটি থাকে। এদিন বেশির ভাগ দেশে শ্রমিকদের শোভাযাত্রা, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি হয়। তবে যে দেশে শ্রমিক হত্যা ঘটেছিল, সেই আমেরিকা সরকারিভাবে ‘লেবার ডে’ পালন করে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার। কানাডাতেও একই দিনে ‘লেবার ডে’ পালন করা হয়।

আমেরিকায় মে মাসের ১ তারিখ ‘মে ডে’ পালন করা হয় বসন্তকালের আগমন দিবস হিসেবে। আমেরিকা ও কানাডায় সেখানকার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং আমেরিকান লেবার ফেডারেশন (নাইট অব লেবার) এই দিনটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। হে মার্কেট হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মনে করেছিলেন, ১ মে তারিখে আয়োজন করা যেকোনো অনুষ্ঠান বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। সে জন্য ১৮৮৭ সালে তিনি নাইট অব লেবার–সমর্থিত শ্রম দিবস পালনে উৎসাহিত করেন।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ১ মে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, ফিলিপাইন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশে এদিনে সরকারিভাবে ছুটি থাকে।

১৯২৩ সালের ১ মে ভারতের চেন্নাইয়ে প্রথম শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। এরপর থেকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য বিভিন্নভাবে দিনটি পালন করে আসছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ সরকার এই দিনকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।

এশিয়ার বাইরেও বিভিন্ন মহাদেশে দিনটি পালিত হয় শ্রমিকদের প্রতি সম্মান ও সংহতি প্রকাশ করতে। আলজেরিয়ায় ১ মে সরকারি ছুটি থাকে। ১৯৬২ সাল থেকে দেশটিতে ১ মে ‘পেইড ব্যাংক হলিডে’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মিসরেও ১ মে ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়। এদিন দেশটির প্রেসিডেন্ট কায়রোতে মে দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে থাকেন। ইথিওপিয়া, ঘানা, কেনিয়া, মরক্কো, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, তানজানিয়া, উগান্ডা, জিম্বাবুয়েতে ১ মে সরকারি ছুটি থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর সরকারিভাবে দিনটি ছুটির দিন হিসেবে পালন করে আসছে।

১৮৯০ সালে আর্জেন্টিনায় প্রথম শ্রমিক দিবস পালিত হয়। ১৯৩০ সাল থেকে আর্জেন্টিনায় ১ মে সরকারি ছুটি দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বলিভিয়া ও ব্রাজিলেও এই দিন ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। শ্রমিকদের সম্মানে ১৯৩১ সাল থেকে চিলি ১ মে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করে আসছে। কলম্বিয়াতেও এই দিন সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। কোস্টারিকাতে এই দিন সরকারি ছুটি থাকে। এদিন কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। সমাজতান্ত্রিক কিউবায় শ্রমিক দিবসে ছুটি থাকে। এই দিনটি কিউবানরা ব্যাপকভাবে দিবসটি উদ্‌যাপন করেন। এদিন কিউবার সবচেয়ে বড় জমায়েত হয় রেভুল্যুশন স্কয়ারে। সারা দিন অনুষ্ঠান চলে সেখানে।

এ ছাড়া হাইতি, হন্ডুরাস, প্যারাগুয়ে ও পেরুতেও ১ মে সরকারি ছুটি থাকে। মেক্সিকোতেও দিনটি ফেডারেল হলিডে বা সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।