চট্টগ্রামের শ্রম আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় অসংখ্য মামলা

সাড়ে ছয় বছর আগে মৌলভীবাজারের রাজনগর টি এস্টেট লিমিটেডের শ্রমিক দীপ চান চাকরিতে পুনর্বহাল চেয়ে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় শ্রম আদালতে মামলা করেন। কিন্তু এখনো নিষ্পত্তি হয়নি মামলাটি। দীপ চানের বাবা, দাদাও ওই চা–বাগানের শ্রমিক ছিলেন। তাঁদের হাত ধরে কিশোর বয়সেই চা–বাগানে কাজ শুরু করেন তিনি। চাকরি হারানোয় দিশেহারা হয়ে পড়েন দীপ চান। তাঁর মতো অনেক শ্রমিকের মামলার বিচার ঝুলে আছে।

চট্টগ্রামের দুটি শ্রম আদালতে ২ হাজার ৭৩টি মামলা বিচারাধীন। এর মধে৵ প্রথম শ্রম আদালতে মামলা রয়েছে ১ হাজার ৪৯৫টি এবং দ্বিতীয় শ্রম আদালতে ৫৭৮টি। এক বছরে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫০টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিচারাধীন ২ হাজার ৭৩টি মামলার মধ্যে ১ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে, যেগুলো ছয় বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি।

আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিচারকশূন্যতা, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি, সমন জারিতে বিলম্ব, জবাব দাখিলে আইনজীবীদের বারবার সময় নেওয়া, প্রতিনিধিদের মতামত প্রদানে বিলম্বের কারণে শ্রম আদালতে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন মামলার বিচার ঝুলে আছে। দীর্ঘদিন শূন্য থাকার পর যদিও বর্তমানে দুটি আদালতে বিচারক রয়েছেন।

প্রথম শ্রম আদালতের মালিক প্রতিনিধি খন্দকার সাইদুর রহমান বলেন, মাঝেমধ্যে আদালতে যেতে পারেন না। একই আদালতের শ্রমিক প্রতিনিধি আজহারুল ইসলাম বলেন, তিনি পদোন্নতি পেয়ে শ্রমিক থেকে কর্মকর্তা হয়েছেন। তালিকায় তাঁর নাম কেন রয়েছে জানেন না।

আইনজীবীরা জানান, শ্রম আদালতে মামলা করার ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করে আরও ৯০ দিন সময় পাওয়া যাবে। শ্রম আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় ঢাকায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করা যায়।

চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও প্রথম শ্রম আদালতের আওতায় রয়েছে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলা। চট্টগ্রামের দ্বিতীয় শ্রম আদালতের আওতায় রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা।

চাকরিতে পুনর্বহাল, পাওনা আদায়, মালিক-শ্রমিক চুক্তির লঙ্ঘন, বেতন-ভাতার দাবি, ক্ষতিপূরণ আদায় এবং ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত মামলা শ্রম আদালতে করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক শ্রম আদালতের বিচারক (শ্রম আদালতের কার্যক্রমে বিচারককে বলা হয় চেয়ারম্যান) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে বিচারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রতি দুই বছর পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় ছয়জন করে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়।

চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ এলাকার একটি সরকারি বাড়িতে দুটি শ্রম আদালতের কার্যক্রম চলে। আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালতে ৪৬৬টি ও দ্বিতীয় শ্রম আদালতে একই সময়ে ৩৮৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এক বছর আগে দুটি আদালতই বিচারকশূন্য থাকায় মামলাজট বেড়ে যায়। বিচারকের পাশাপাশি চার বছর ধরে দুটি শ্রম আদালতে রেজিস্ট্রারও নেই। রয়েছে অফিস সহকারী, নিরাপত্তারক্ষীসহ জনবল–সংকট।

চাকরি হারানো শ্রমিক দীপ চান জানান, ২০১২ সালের ২৭ মে তিনি চট্টগ্রাম দ্বিতীয় শ্রম আদালতে মামলা করেন। বছরখানেক আগে বিচারক না থাকায় বেশ কয়েকবার চট্টগ্রাম এসে ফিরে যান। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করছেন। বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। বাদীর আইনজীবী সুখময় চক্রবর্তী বলেন, মামলা চূড়ান্ত শুনানির জন্য রয়েছে। আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় বাদী মৌলভীবাজার থেকে আসতে পারেন না।