চলনবিলে ধান কাটার ধুম

নাটোরের চলনবিল এলাকায় চলছে ধান কাটার ধুম। সিংড়ার সাতপুকুরিয়া এলাকার চলনবিল থেকে ধান কেটে বাড়ি নিচ্ছেন কৃষকেরা। গত রোববার বিকেলে বিলের জমিতে।  প্রথম আলো
নাটোরের চলনবিল এলাকায় চলছে ধান কাটার ধুম। সিংড়ার সাতপুকুরিয়া এলাকার চলনবিল থেকে ধান কেটে বাড়ি নিচ্ছেন কৃষকেরা। গত রোববার বিকেলে বিলের জমিতে। প্রথম আলো

নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম পড়ে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিরূপ আবহাওয়ায় এ ধান কতটা নিরাপদে ঘরে তুলতে পারবেন, আর পারলেও ন্যায্য মূল্য পাবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা। চড়া পারিশ্রমিক ও শ্রমিক–সংকটের কারণে তাঁরা যে ধান ঘরে তুলবেন, তা–ও পারছেন না।

গত শনিবার সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম, জামতলী, শেরকোল, সাঁতপুকুরিয়াসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিলজুড়ে মাইলের পর মাইল সোনালি ধান। যেন মাঠজুড়ে পাকা ধানের সোনালি কার্পেট পাতা। বাতাসে ভাসছে পাকা ধানের মিষ্টি গন্ধ। কয়েক দিন আগের কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে কিছু ক্ষতি হলেও ইরি-বোরো ধানের ভালো ফলনের আশা ছাড়ছেন না কৃষকেরা। তবে নিম্নচাপের খবরে ঝড়, শিলাবৃষ্টি নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা। সবাই তাড়াতাড়ি ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শ্রমিক–সংকট, উচ্চ পারিশ্রমিক ও পরিবহন–সংকটে কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে ধান ঠিকঠাক ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তায় আছেন তাঁরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় ও এলাকার বাইরে থেকে আসা শ্রমিকেরা দল বেঁধে ধান কাটছেন। মাঠের সব জমির ধান এখনো সম্পূর্ণ পাকেনি। যেসব জমির ধান পেকেছে চাষিরা সেই জমির ধান আগে কাটছেন। অনেক জমিতে জমে আছে পানি। এই পানিতে দাঁড়িয়েই চলছে ধান কাটা। দুপুরের পরপরই কাটা ধান মাথায় করে নির্ধারিত স্থানে জমা করা হচ্ছে। সেখান থেকে মহিষ, ঘোড়া ও যন্ত্রচালিত গাড়িতে মাড়াইয়ের স্থানে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে মাড়াই শেষে শুকানোর পর বস্তাভর্তি ধান চলে যাচ্ছে কৃষকের বাড়িতে।

এখন চলনবিল এলাকার সব কৃষক পরিবারের নারী-পুরুষই মাঠে ব্যস্ত। পুরুষেরা শ্রমিকদের সঙ্গে ধান কাটছেন। নারীরা ধান শুকাচ্ছেন। সবাই যেন যন্ত্রের মতো কাজ করে যাচ্ছেন।

সাতপুকুরিয়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন নিজ জমির ধানের শিষ নেড়ে দেখছিলেন। বললেন, ‘ধান কাটার মতো হয়েছে কি না, দেখছি। ঝড়বৃষ্টির খবরে খুব চিন্তা হচ্ছে। শিল পড়লে পাকা ধান ঝরি পড়বি। সব কষ্ট বৃথা যাবি।’

বেড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক মশিউর রহমান বলেন, ‘মিনিকেট ধানের ফলন কম হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ বিঘা জমির ধান কাটিছি। ধান হয়েছে মাত্র ৮০ মণ। ধান কাটতে শ্রমিকদের মণপ্রতি ৫ কেজি ধান ও তিন বেলা খাতি দিতে হয়েছে। জমি থ্যাকি ধান টানা ও মাড়াই বাবদ চলি গ্যাছে মণপ্রতি ১০ কেজি। বাদবাকি যা থাকছে তা দিয়ে খরচই উঠছে না।’

চৌগ্রামের আতাউর রহমান বলেন, বাজারের সবচেয়ে ভালো ধান মিনিকেট। এই ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। অন্য ধানের দাম আরও কম। ধান লাগানো, সার–বীজ কেনা, সেচ ও পরিচর্যা বাবদ প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৮০০ টাকা। তাই মণপ্রতি ধানের দাম ১ হাজার টাকা না হলে লোকসান হবে। এসব কথা চিন্তা করলে আর ধানই কাটতে ইচ্ছা করে না বলে তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সিংড়া এলাকায় ৩৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, বিপত্তি না ঘটলে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চলতি বোরো মৌসুমের মাঝখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আগাম জাতের কিছু (মিনিকেট) ধানে চিটা হয়েছে। তবে অন্যান্য ধান ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধান উৎপাদনে কৃষকের লোকসান হবে না। ধান পাকামাত্র জমি থেকে কেটে নেওয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধানের বাজারমূল্য সম্পর্কে তিনি জানান, সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হলে বাজারে ধানের দাম বাড়বে। কৃষকদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।