টাকা না পেয়ে মামিকে খুন

দাবি করা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় দূরসম্পর্কের ভাগনের হাতে খুন হন চট্টগ্রাম নগরের কোরবানিগঞ্জের গৃহবধূ রোকসানা বেগম (৪২)। ভাগনে মো. সোহেলকে (৩৫) গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এই স্বীকারোক্তি দেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাঁকে কর্ণফুলী থানা এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

এর আগে একইদিন বেলা ১১টার দিকে নগরের কোরবানিগঞ্জের বাসায় গৃহবধূ রোকসানাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় রোকসানার ছেলে আবদুল আজিজকে (২৩) ছুরিকাঘাত করেন সোহেল। আজিজ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

আহত আজিজের ভাষ্য এবং কোরবানিগঞ্জে বাসাটির আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে সোহেলকে পুলিশ খুনি হিসেবে চিহ্নিত করে। খুনের পর নিজেকে বাঁচাতে সোহেল স্ত্রীসহ নগরের মিয়াখান নগরের নুরুল হক হাজীর কলোনির বাসা ছেড়ে পালিয়ে যান। কর্ণফুলী এলাকায় বিকেলে একটি বাসা ভাড়া করেন।

গ্রেপ্তার সোহেলের বাড়ি চন্দনাইশে। তাঁর বাবার নাম জামাল উদ্দিন। তিনি মিয়াখাননগর এলাকায় ভাড়া থাকতেন। আজ বুধবার পুলিশ তাঁকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে।

কোতোয়ালি থানায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আমেনা বেগম বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পাওয়া সোহেলের ছবি বিভিন্ন জায়গায় সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যায় কর্ণফুলী থানা এলাকায় তাঁর আত্মগোপনের সংবাদ পাওয়া যায়। পরে এসি নোবেল চাকমার নেতৃত্বে একটি দল সোহেলকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনিই একমাত্র খুনি বলে স্বীকার করেছেন। টাকার জন্য তিনি এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। সোহেল রোকসানার কাছে ২৮ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন।

গ্রেপ্তারের পর রোকসানার বাসা থেকে খোয়া যাওয়া একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, ইমিটেশন ও স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া হত্যার সময় ব্যবহৃত একটি খেলনা পিস্তলও উদ্ধার করা হয় বলে জানান কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন।

গতকাল হত্যাকাণ্ডের পর রোকসানার স্বামী আবুল কাশেম কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছিলেন। আজ থানায় উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, সোহেল তাঁর দূরসম্পর্কের ভাগনে। মাঝেমধ্যে বাসায় আসতেন। গতকাল বাসায় গিয়ে সোহেল তাঁর স্ত্রীর কাছে টাকা দাবি করেন।

অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, সোহেল তিন বছর ধরে ইয়াবাসক্ত ছিলেন। তাঁর ঘরভাড়া ২৮ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছিল। সে জন্য তিনি টাকার জন্য রোকসানার কাছে যান। সঙ্গে ছুরি ও খেলনা পিস্তল নিয়ে যান। ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তিনি ছুরিকাঘাত করেন। বাড়ির গৃহপরিচারিকাকে একটি বাথরুমে আটকে রাখেন। এ ছাড়া নিচে নেমে যাওয়ার সময় রোকসানার ছেলে আজিজ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিলেন। তখন আজিজ সোহেলকে চিনতে পারেন। চিনে ফেলায় আজিজকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান তিনি।

পুলিশ হেফাজতে থাকা সোহেল স্বীকার করেন, টাকা না পেয়ে তিনি তাঁর মামিকে খুন করেন।