রাতভর জাল ফেলে ২ ইলিশ

রাতভর মাছ ধরা শেষে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর ওপর নৌকা ভাসিয়ে রান্না করছিলেন জেলে হরিপদ নাথ। এই পঞ্চাশোর্ধ্ব জেলের মন ভালো না। রাতভর জাল টেনে মাছের দেখা তেমন না মেলাই যে মন ভারের কারণ, তা জানাতে কসুর করলেন না হরিপদ। দুই মাস ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। তারপরই জনা দশেক জেলে নিয়ে নদীতে নেমেছিলেন। সারা রাতের তপস্যার ফল করুণ। হরিপদ বলছিলেন, একটি নৌকা নিয়ে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর এলাকায় পদ্মা ও মেঘনায় দুবার জাল ফেলেন। কিন্তু রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে মাত্র দুটি ইলিশের দেখা মেলে। এতে তাঁদের ৫ হাজার টাকা ব্যয় হলেও সেই টাকা ওঠেনি। মনে ভালো নেই তাঁর।

চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছঘাটে পড়ে আছে কয়েকটি ইলিশ। ছবি: আলম পলাশ
চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছঘাটে পড়ে আছে কয়েকটি ইলিশ। ছবি: আলম পলাশ

হরিপদের দলেরই যে এ অবস্থা, তা নয়। সব জেলেরই এক অবস্থা। তাই অনেকটা শূন্য হাতে ফিরছেন জেলেরা। সরেজমিনে আজ বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুরের মেঘনা মোহনায় ও বড়স্টেশন মাছঘাটে ঘুরে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য পাওয়া যায়।

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় দুই মাস পর মাছ ধরা শুরু হলেও মাছ না পেয়ে জেলেরা বসে আছেন। ছবি: আলম পলাশ
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় দুই মাস পর মাছ ধরা শুরু হলেও মাছ না পেয়ে জেলেরা বসে আছেন। ছবি: আলম পলাশ

চাঁদপুরের সবচেয়ে বড় মাছের আড়ত বড়স্টেশনেও আকাল ইলিশের।
চাঁদপুর মাছঘাটের মাছ ব্যবসায়ী আহমদ উল্লাহ বলেন, ‘মাছঘাটে ভোর থেকে বসে আছি ইলিশের আশায়। কিন্তু দু-চারটি ইলিশের বেশি মাছ নিয়ে কোনো জেলেই আসছে না।’ তাঁর মতো অন্য আড়তদারদেরও ইলিশ না পেয়ে যাঁর যাঁর প্রতিষ্ঠানে বসে থাকতে দেখা যায়।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল খালেক মাল বলেন, ‘এবার একেবারেই ইলিশশূন্য চাঁদপুর মাছঘাট। কারণ চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার সব ইলিশ অভিযান চলার সময়ই কিছু অসাধু জেলে ধরে ফেলেছে। তবুও আমরা আশা করছি পরে যদি কিছু ইলিশ পাওয়া যায়।’

রাতভর জাল ফেলে এমন মহার্ঘ্য ইলিশ মিলেছে। ছবি: আলম পলাশ
রাতভর জাল ফেলে এমন মহার্ঘ্য ইলিশ মিলেছে। ছবি: আলম পলাশ

গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
এ সময় চাঁদপুরের নিবন্ধিত প্রায় ৫২ হাজার জেলে পরিবারের জন্য বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।