ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী নৌযান চলা বন্ধ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতের আশঙ্কায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালসহ সারা দেশের ৪১টি রুটের যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতের আশঙ্কায় বিআইডব্লিউটিএ আজ সকাল ১০টার দিকে বিআইডব্লিউটিএর সভাকক্ষে এক জরুরি সভায় বসে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কমডোর এম মাহাবুবুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতের আশঙ্কায় ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালসহ সারা দেশের ৪১টি নৌপথের যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা নদীবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি নৌপথের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

চাঁদপুরগামী আব্দুল আজিজ জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সরকার নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে সড়কপথে চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছি।

মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টিগামী শিলারা ইসলাম জানান, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদরঘাট টার্মিনালে এসে শুনি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লঞ্চ ছাড়বে না। আমার ভাই অসুস্থ। ভাবছি, বাসযোগে বাড়ি চলে যাব।’

ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে সাগর উত্তাল থাকায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আজ সকাল ১০টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জরুরি বার্তায় নতুন করে এই সংকেত দেখানোর কথা বলা হয়। এই দুই বন্দরে আগে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছিল। আজ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে আগের ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ফণীর আঘাত বেশ মারাত্মক হতে পারে। ফণীর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে। ডুবে যেতে পারে নিম্নাঞ্চল।

আজ সকাল পর্যন্তও বেশির ভাগ সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি ছিল।

গতকাল বুধবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ফণী আগামী শনিবার সকালে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

তবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ধীরে এগিয়ে এলেও ফণী বেশ শক্তিশালী হয়ে গেছে। এখন তার গতি বেড়ে গেছে। তাই ফণী ৪ মের আগেও বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফণী বাংলাদেশে আছড়ে পড়ার আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা রাজ্যের উপকূলে আঘাত করতে পারে। তাই কিছুটা দুর্বল অবস্থায় ফণী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার দিকে আসবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, ফণীর শক্তি কেমন হবে, সেটি আজ দুপুরে বোঝা যাবে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, ফণী কখন আঘাত হানবে, তার ওপর ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করবে। আঘাত যদি জোয়ারের সময় হয়, তাহলে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা বেশ বেশি হবে।

ফণী আজ সকাল ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। স্বল্প সময়ের নোটিশে তারা যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে, সে জন্য সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। নাম দেওয়া হয় ফণী।