বিআইডব্লিউটিএর সব কর্মীর ছুটি বাতিল

ঘূর্ণিঝড় ফণীর মোকাবিলায় সারা দেশে সব ধরনের নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

তবে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও দেশের অভ্যন্তরের নদীতে ফেরি চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানানো হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সকালে জানিয়েছে, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী আগামী শনিবারের আগেই বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলের ১৯ জেলায় এর মধ্যে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে সাগর উত্তাল থাকায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আজ সকাল ১০টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জরুরি বার্তায় নতুন করে এই সংকেত দেখানোর কথা বলা হয়। এই দুই বন্দরে আগে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছিল। আজ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে আগের ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ফণীর আঘাত বেশ মারাত্মক হতে পারে। ফণীর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে। ডুবে যেতে পারে নিম্নাঞ্চল।

এমন পরিস্থিতিতে আজ বিআইডব্লিউটিএ দেশের সব নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। বিআইডব্লিউটিএর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন ফণীর মোকাবিলায় বিআইডব্লিউটিএর সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সারা দেশে নৌচলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সব নৌযানকে নিরাপদে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ নৌচলাচল বন্ধ করলেও বিআইডব্লিউটিসি দেশের ভেতরে নদীপথে ফেরি চলাচল অব্যাহত রেখেছে। সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মিশা আজ বেলা সাড়ে ১২টায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ভেতরের নদীপথগুলোতে ফেরি চলাচল এখনো বন্ধ হয়নি। এসব চলাচল অব্যাহত আছে। তবে ঝড় আঘাত হানলে এসব বন্ধ হয়ে যাবে।’

আজ সকাল পর্যন্তও বেশির ভাগ সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর সতর্কসংকেত জারি ছিল। গতকাল বুধবার রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ফণীর গতিপথ ঠিক থাকলে বা এটি আরও ঘনীভূত হলে কাল (আজ বৃহস্পতিবার) বিকেলে ৫, ৬ বা ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেওয়া হতে পারে।’

আজ সকালেই ৪ নম্বর সতর্কসংকেত নামিয়ে পায়রা ও মোংলায় ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেওয়া হলো।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দীন আহমেদ আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ধীরে এগিয়ে এলেও ফণী বেশ শক্তিশালী হয়ে গেছে। এখন তার গতি বেড়ে গেছে। তাই ফণী ৪ মের আগেও বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।

ফণী আজ সকাল ছয়টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।