এক শপথ নিয়ে বিএনপির তিন সিদ্ধান্ত

হারুন উর রশীদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান।
হারুন উর রশীদ, মোশাররফ হোসেন, আবদুস সাত্তার, আমিনুল ইসলাম ও জাহিদুর রহমান।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মাত্র ছয়টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপি। প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে দলটি সিদ্ধান্ত নেয়, তারা সংসদে যাবে না। সংসদ সদস্য হিসেবে এই ছয়জনের কেউই শপথ নেবেন না। এই সিদ্ধান্ত শুধু এককভাবে বিএনপির ছিল, তা নয়, জোটগতভাবে শরিক দল গণফোরামের দুই নির্বাচিত সদস্যেরও শপথ নেওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু চার মাসের মধ্যে সবকিছু ওলট–পালট হয়ে গেল।

শপথ ইস্যুতে বিএনপি আগের অবস্থানের একেবারেই উল্টো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই বলেছেন, এটি রাজনীতিতে বিএনপির চমক ও ইউটার্ন। তবে রাজনীতিবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই; এটা ঠিক। কিন্তু একটি ইস্যুতে তিন ধরনের সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ একে অভিনব বলেও মত দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বিএনপি তাদের নির্বাচিত ছয়জনের জন্য তিন ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা আসলেই রাজনৈতিকভাবে দূরদর্শিতা কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে বোঝা যাচ্ছে, নেতা-কর্মীদের ওপর বিএনপির নিয়ন্ত্রণ কম থাকার কারণেই তিন ধরনের সিদ্ধান্ত এসেছে।

শপথ ইস্যুতে নির্বাচিত ছয়জনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে বিএনপি। সিদ্ধান্ত তিনটি হলো প্রথম শপথ নেওয়া দলীয় সাংসদ জাহিদুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চার সাংসদ হারুনুর রশীদ, আমিনুল ইসলাম, উকিল আবদুস সাত্তার ও মোশাররফের জন্য দলীয় সিদ্ধান্ত হলো তাঁরা সংসদে যাবেন। আর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত শপথ নেবেন না। অর্থাৎ মির্জা ফখরুল সংসদ সদস্য হবেন না।

এর মধ্যে সাংসদ হিসেবে শপথ না নেওয়ায় যে আসন (বগুড়া-৬) থেকে ফখরুল নির্বাচিত হয়েছিলেন, তা শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই সংসদে ফখরুল আর সাংসদ হিসেবে থাকছেন না।

দলীয় কোনো পদে না থাকলেও বিএনপির রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি সংসদে গিয়ে কথা বলার পক্ষেই ছিলাম। তবে যে পদ্ধতিতে বিএনপি গেল, সেই যাওয়াটা ভুল। সিদ্ধান্ত সঠিক কিন্তু পথটা ভুল। বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং সবাইকে জানিয়েই করতে পারত।’ তিনি মনে করেন, একটাই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত ছিল।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, অনেকটা বাধ্য হয়েই সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বিএনপিকে। বিএনপি সিদ্ধান্ত না নিলে চার সাংসদের সংসদে যাওয়া ঠেকানো যেত না। কেবল মির্জা ফখরুলই সংসদে না যাওয়ার ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। ফলে, দলে ভাঙন হওয়ার আশঙ্কা ছিল। দলের নেতৃত্বের দুর্বলতাও সামনে আসত।

গত ২৫ এপ্রিল সাংসদ হিসেবে শপথ নেন ঠাকুরগাঁও থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান। এর দুদিন পর জাহিদকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। কিন্তু দুদিন পরেই চার সাংসদের বেলায় ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু চার সাংসদের বেলায় সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিলেও মির্জা ফখরুল এই সিদ্ধান্তের বাইরে থাকেন।

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত একজন শিক্ষাবিদ বলেন, সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপি পানি ঘোলা করে তা খেয়েছে এটা ঠিক। তবে সিদ্ধান্ত একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হওয়াটা ঠিক হয়নি। এটা বিভ্রান্তিকর। তবে এই শিক্ষাবিদ বলেন, শেষ মুহূর্তে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় বিএনপির ছিল না।

অবশ্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে এই সিদ্ধান্তকে দলীয় কৌশল বলেছেন। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত তাঁর কাছে চূড়ান্ত। সেটা ঠিক বা ঠিক নয়, তা সময়ই বলতে পারবে।