ডাকসুর নামে রাব্বানীর 'ব্যক্তিগত' বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিতর্ক

ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী
ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নামে গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে৷ বিজ্ঞপ্তিটিতে শুধু ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর স্বাক্ষর রয়েছে৷ বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক৷ ছাত্রলীগের বাইরে থেকে নির্বাচিত ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানেনই না৷ তবে ছাত্রলীগ বলছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয়েছে৷

বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়েছে, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি প্রেরণে ডাকসু একক এখতিয়ার রাখে৷ এ বিষয়ে ডাকসুর সংশ্লিষ্ট সম্পাদকগণ দ্রুত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবেন৷ তার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হয়ে যেকোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগে ডাকসুর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করা হলো৷’ তবে ডাকসুর কার্যাবলি সংক্রান্ত গঠনতন্ত্রের ৩(ঙ) ধারায় সহশিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে, ডাকসু সম্ভব হলে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক ও শিক্ষা সম্মেলনে প্রতিনিধি প্রেরণ করবে৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদের ডিন, হলগুলোর প্রাধ্যক্ষ (হল সংসদের সভাপতি), ইনস্টিটিউটগুলোর পরিচালক, বিভাগগুলোর চেয়ারম্যান, প্রক্টর কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে বিজ্ঞপ্তিটির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে৷

ওই বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ শিক্ষার্থীদের আড্ডায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে৷ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমের ওপর এ ধরনের ‘নিয়ন্ত্রণ’ আরোপের এখতিয়ার কারও নেই৷ যে যাঁর যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী যেকোনো প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার রাখেন৷

ওই বিজ্ঞপ্তির সমালোচনায় শামিল হয়েছে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক, শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ, স্বতন্ত্র জোট থেকে ডাকসুর ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অরণি সেমন্তি খান, ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উম্মে হাবিবা বেনজীরসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ৷ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ডাকসুর নামে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন৷

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ওই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তাঁর সঙ্গে বা ডাকসুতে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি৷ বিজ্ঞপ্তিটিকে ছাত্রলীগের ‘দখলদারি প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এটি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ‘ব্যক্তিগত’ বিজ্ঞপ্তি৷ সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ওই বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না৷

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেকোনো বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসুর ভিপি ও জিএসের স্বাক্ষর থাকার নিয়ম থাকলেও এই বিজ্ঞপ্তিতে শুধু জিএস গোলাম রাব্বানীর স্বাক্ষর রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেকোনো বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসুর ভিপি ও জিএসের স্বাক্ষর থাকার নিয়ম থাকলেও এই বিজ্ঞপ্তিতে শুধু জিএস গোলাম রাব্বানীর স্বাক্ষর রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতামূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে ডাকসুর ‘হস্তক্ষেপ’কে শিক্ষার্থীদের স্বকীয়তার ওপর ‘অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপের অপকৌশল’ হিসেবে দেখছেন শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ৷ স্বতন্ত্র জোট থেকে ডাকসুর ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অরণি সেমন্তি খান বলেন, ‘যাদের মূলমন্ত্র দখলদারি আর ভাই যা বলে তা-ই, সবাইকে সেই যাত্রায় শামিল করতে প্রথম পদক্ষেপ এই বিজ্ঞপ্তি৷’ ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উম্মে হাবিবা বেনজীরের প্রশ্ন, ‘ডাকসুর বিজ্ঞপ্তি হয়ে থাকলে এতে ভিপির স্বাক্ষর কোথায়?’ ডাকসুতে ‘স্বৈরতন্ত্র’ শুরু হয়েছে বলেও মত দেন তিনি৷

এ বিষয়ে জানতে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষরকারী ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷

জানতে চাইলে ডাকসুর এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ডাকসুর সবার সঙ্গে আলোচনা করেই বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ডাকসুর ভিপি গণতান্ত্রিক চেতনায় ‘বিশ্বাস করেন না বলেই’ বিরূপ মন্তব্য করছেন৷ বিজ্ঞপ্তির বক্তব্যের সমালোচনার বিষয়ে সাদ্দাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রশ্নই আসে না, সবাই স্বকীয়তা বজায় রেখেই কাজ করবে৷

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক সহশিক্ষা কার্যক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি প্রেরণে ডাকসু ‘একক এখতিয়ার’ রাখে কি না, জানতে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ তাঁর কার্যালয়ে গেলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা৷