কক্সবাজারে ভাঙছে বেড়িবাঁধ, প্লাবিত হচ্ছে গ্রাম

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। অমাবস্যা ও জোয়ারের পানির ধাক্কায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোনা পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের ঘরবাড়ি। নতুন করে বেড়িবাঁধও ভাঙছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙা বাঁধ সংস্কার করে জোয়ারের প্লাবন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।

শুক্রবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওডিশায় আঘাত হানে। এর প্রভাবে কক্সবাজার উপকূল উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ফণীর প্রভাবে আগামী দুই দিন কক্সবাজারে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।

২২ গ্রামে জোয়ারের প্লাবন

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট বেড়েছে। এর ওপর চলছে অমাবস্যার প্রভাব। শুক্রবার জোয়ারের ধাক্কায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফ উপজেলার ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কুমিরছড়া, পশ্চিম তাবলেরচর, কাহারপাড়া, উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের কায়সার পাড়া, নয়াকাটা, আকবর বলী পাড়াঘাট, সতরউদ্দিন পাড়া, লেমশিখালী ইউনিয়নের পেয়ারাকাটা, কৈয়ারবিলের মলমচর ও বড়ঘোপ ইউনিয়নের আজম কলোনি, আমজাখালী ও মুরালিয়া গ্রামের কয়েক শ ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে।

আলী আকবর ডেইলের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছফা প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার চারদিকে বেড়িবাঁধ আছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে অন্তত ১০ কিলোমিটার ভাঙাচোরা। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে এখন জোয়ারের পানি ঢুকছে।

স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপক কুমার বলেন, জলোচ্ছ্বাসকবলিত গ্রামের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে প্রশাসন।

মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর রাজঘাট ও সাতপাড়া, ধলঘাটা ইউনিয়নের হামিদখালী, সরাইতলী, সাপমারারডেইল ও ভারতঘোনা এবং টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপের দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ঘোলাপাড়া ও জালিয়াপাড়া জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। গৃহহীনদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে।

ভাঙছে বেড়িবাঁধ
পাউবো সূত্র জানায়, জেলার টেকনাফ, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়াসহ আট উপজেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে ৫৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে আরও ১০ কিলোমিটার। শুক্রবার জোয়ারের ধাক্কায় ধলঘাটার সরাইতলী ও হামিদখালী গ্রামে ২০-৩০ মিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড লোকজন দিয়ে ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকোশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ধলঘাটায় ভাঙা বাঁধের সংস্কারকাজ চলছে। অন্যান্য এলাকার ভাঙনরোধে কাজ করছে পাউবো। তিনি আরও জানান, বেড়িবাঁধের ওপর পাউবোর স্লুইসগেট রয়েছে চার শর বেশি। যেসব স্লুইসগেট খোলা ছিল সেগুলো শুক্রবার জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন সমুদ্রে জোয়ারের পানি বাড়লেও স্লুইসগেট দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকার সুযোগ নেই।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, অমাবস্যার প্রভাব থাকায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ৫-৬ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।