গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামী গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকার সাভারে গৃহবধূ রুমানা আফরোজকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার ভোরে সাভারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় হত্যার অভিযোগে গৃহবধূর বাবা সাভার মডেল থানায় মামলা করেছেন।

মামলায় রুমানার স্বামী নূরে আলম, দেবর দেলোয়ার হোসেন, ননদ লাভলী আক্তার, শাশুড়ি সামসুন্নাহার ও লাভলীর স্বামী আমানকে আসামি করা হয়েছে। শুক্রবার মামলার পর হাসপাতাল থেকে রুমানার স্বামী নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গৃহবধূ রুমানা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল জলিলের মেয়ে। প্রায় ১৬ বছর আগে সাভার পৌর এলাকার কর্ণপাড়া মহল্লার ইদ্রীস আলীর ছেলে নূরে আলমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের ৯ বছরের এক ছেলে সন্তান আছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বিয়ের পর থেকেই রুমানাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজন। গত বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে রুমানাকে বাসার দ্বিতীয় তলার বারান্দায় নিয়ে তাঁর শরীরের কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী নূরে আলম, দেবর দেলোয়ার হোসেন, শাশুড়ি সামসুন্নাহার, ননদ লাভলী আক্তার ও তাঁর (লাভলীর) স্বামী আমান। এ সময় রুমানার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে রুমানার মৃত্যু হয়।

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের চিকিৎসক সোয়েতা বলেন, আগুনে রুমানার শরীরের শতভাগ পুড়ে যায়। এই কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

রুমানার দেবর দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর মা সামসুন্নাহার ৭০ বছরের বৃদ্ধা। চলাফেরা করতে পারেন না। আর তাঁর ভাই নূরে আলম আড়াই বছর আগে স্ট্রোক হয়ে এখনো অসুস্থ। তাঁর বাঁ হাত আর বাঁ পা ভালো কাজ করে না। এ ছাড়া তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি সাভারে থাকেন না। তিনিও বাসায় ছিলেন না। এরপর তাঁদের আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর ভাবি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে নিজের শরীরের কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁকে কেউ হত্যা করেনি।

রুমানার স্বামী নূরে আলম বলেন, আড়াই বছর ধরে তিনি অসুস্থ। এ নিয়েই তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হতো। গত বৃহস্পতিবার সকালেও ঝগড়া হয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর দ্বিতীয় তলা থেকে তাঁর স্ত্রী চিৎকার দেন। এ সময় তিনি নিচতলায় ছিলেন। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাঁর শরীরের আগুন জ্বলতে দেখেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেছেন, দুই দফা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত গৃহবধূ রুমানার শরীরের কেরোসিন ঢেলে হত্যার ঘটনায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পর থেকে রুমানার স্বামী ছাড়া পরিবারের সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর রুমানার সঙ্গে হাসপাতালে যান তাঁর স্বামী নূরে আলম। স্ট্রোকে আক্রান্ত তিনি অনেকটাই অসুস্থ। হাসপাতালে যাওয়ার পর আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তাঁকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার মামলা পর সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

রুমানার বাবা আবদুল জলিল বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছিলেন। এর জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, রুমানার শরীর আগুনে পুড়ে গেছে। তবে কেউ তাঁকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, না তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।