স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কার

জনপ্রতিনিধিদের কাছে চিঠিপত্র লেখা হয়েছে অনেকবার। সরকারি দপ্তরগুলোও ঘোরা বাকি নেই। কিন্তু রাস্তা সংস্কার করতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই আর বসে না থেকে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্ব বেলাগাঁও গ্রামের লোকজন নিজেরাই শুরু দিয়েছেন রাস্তা সংস্কারের কাজ।
সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের ওই গ্রামে গতকাল শনিবার সকাল সাতটায় দেখা যায়, কারও হাতে টুকরি, কারও হাতে কোদাল। কোদাল দিয়ে মাটি কেটে টুকরিতে ভরা হচ্ছে। আর এসব টুকরি মাথায় করে নিয়ে রাস্তার ভাঙাচোরা অংশে ফেলা হচ্ছে। গ্রামেরই কয়েক শ লোক এই কাজ করছেন। নয় দিন ধরে চলছে তাঁদের এই কাজ। রাস্তার অধিকাংশ স্থান মাটি ভরাট করে দুই-তিন ফুট উঁচু করা হয়ে গেছে।
ছবি তুলতে গেলে সংস্কারকাজে অংশ নেওয়া জালাল আহমদ বলেন, ‘ছবি তুইলেন না। ছবি তুইলা তো বড় বড় অপিসাররে নিয়া এইটারে তাঁদের কাম হিসেবে দেখাইবেন। সরকার কিন্তু এক টাকাও দিছে না। আমরাই রাস্তার কাম করতাছি।’
প্রায় ১৫ জন গ্রামবাসী বলেন, জুড়ী-কুলাউড়া সড়কের কণ্ঠিনালা নদীর ওপর স্থাপিত সেতুর পূর্ব পাড় থেকে নদীর রাবার বাঁধ এলাকা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তা আছে। এর পাশের গ্রাম পূর্ব বেলাগাঁওয়ে প্রায় চার হাজার মানুষের বাস। এটাই উপজেলা সদরের সঙ্গে গ্রামবাসীর যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। শীত মৌসুমে অনেক পর্যটক এই রাস্তা দিয়ে হাকালুকি হাওরে যান। বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কণ্ঠিনালার পানি উঠে রাস্তাটি তলিয়ে যায়। তখন চলাচলের ভরসা নৌকা। আর পানি নেমে গেলে শুরু হয় ভাঙন। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তাটির সংস্কার হচ্ছে না।
সংস্কারের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ‘সম্ভাবনার বেলাগাঁও যুব ও সমাজকল্যাণ পরিষদ’ নামে গ্রামের একটি সামাজিক সংগঠন রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এ ব্যাপারে সংগঠনের সদস্যরা গ্রামবাসীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তাটি সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে গ্রামবাসী সম্মতি দেন। ১১ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়।
উদ্যোক্তা সংগঠনের সভাপতি আফজল হোসেন বললেন, বেহাল রাস্তার কারণে তাঁদের দুর্ভোগের শেষ নেই। এ অবস্থায় গ্রামবাসী মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত কাজ চলে। সাত-আট দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় কয়েকটি স্থানে প্রতিরক্ষা দেয়াল দরকার। সরকারিভাবে যদি এ কাজটা করা হয়, তা হলে রাস্তাটি সহজে ভাঙবে না।
জায়ফরনগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শরীফুল ইসলাম গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, ‘পূর্ব বেলাগাঁওয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তার কাজ করার কথা শুনেছি। রাস্তাটার কাজের জন্য প্রকল্প বরাদ্দে আমি চেয়ারম্যানকে অনেকবার অনুরোধ করেছি। লাভ হয়নি।’
আর ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল ইসলাম বলেন, সীমিত বরাদ্দ থাকায় এই রাস্তাটির কাজ করানো যায়নি। তবে পরে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গুলশান আরা বলেন, রাস্তাটির বেহাল অবস্থা তিনি দেখেছেন। তিনি রাস্তাটির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।