চট্টগ্রামে খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ রমজানে

খাল-নালা পরিষ্কার করায় আগের তুলনায় চট্টগ্রাম নগরে এবার জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কম হবে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী। একই সঙ্গে রমজান মাসে খালের ওপর গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি। খালের জায়গা দখলকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আজ শনিবার দুপুরে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সদর দপ্তর নগরের দামপাড়ায় নিজেদের কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য খালের মুখে ও ভেতরে দেওয়া বাঁধ বর্ষার আগেই অপসারণ করার ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী।

খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রমজানে অভিযান
চট্টগ্রাম নগরের খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সম্প্রতি আন্তমন্ত্রণালয় এক বৈঠকে খালের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রমজানের মধ্যেই এ অভিযান শুরু হবে। চলতি সপ্তাহে সিটি করপোরেশন, সিডিএ ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।

সভায় আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী বলেন, নগরের খালগুলোর যে প্রশস্ততা থাকার কথা তা নেই। বিভিন্ন জায়গায় খালের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। অবৈধ স্থাপনা থাকলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল পাওয়া যাবে না।

অপসারণ করা হবে খালের বাঁধ
কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন খালের মুখে ও ভেতরে দেওয়া সবগুলো বাঁধ বর্ষার আগেই অপসারণ করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বাঁধগুলো অবশ্যই খুলে দিতে হবে। বর্ষা আসন্ন। কোনো অবস্থাতেই এগুলো রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোথাও বাঁধ থাকলে তা মুঠোফোনে বা সরাসরি জানানোর জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন তিনি।
গত ২৮ এপ্রিল প্রথম আলোতে ‘খালের মুখে বাঁধ, জলাবদ্ধতায় নাকাল হবেন নগরবাসী’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এবার জলাবদ্ধতার প্রকোপ কমবে
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খনন করা হবে। তিন পর্যায়ে নগরের খালগুলো খনন ও সংস্কার করা হচ্ছে। প্রথম দফায় গুরুত্ব অনুযায়ী ১৩টি খালের খননকাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি এবং শেষ পর্যায়ে বাকি খালগুলো থেকে মাটি উত্তোলন করা হবে। গত বছর খালগুলো থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ঘনফুট এবং চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৪২ লাখ ঘনফুট মাটি উত্তোলন করা হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী সভায় বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ খালগুলো থেকে মাটি ও বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে। অনেক নালা পরিষ্কার করা হয়েছে। ফলে এবার জলাবদ্ধতার প্রকোপ আগের তুলনায় কম হবে।

সভায় আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী বলেন, নগরের নালা ও খালে সেবা সংস্থার পাইপ থাকার কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব পাইপ অপসারণ করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় পানি নিষ্কাশনে কোথাও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা দ্রুত অপসারণের জন্য ‘রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে বলে জানানো হয় সভায়। জনগণকে সচেতন করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শোভাযাত্রা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে।

গতকালের সভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু সাদাত মোহাম্মদ তানভীর। বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল প্রমুখ।