নদী বাঁচাতে গায়ে কাফনের কাপড়

ইছামতী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যরা পাবনা শহরের খেয়াঘাট এলাকায় কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন করেন। ছবি: হাসান মাহমুদ
ইছামতী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যরা পাবনা শহরের খেয়াঘাট এলাকায় কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন করেন। ছবি: হাসান মাহমুদ

দীর্ঘদিনের দখল–দূষণে পাবনা জেলা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। জেলার চাটমোহর উপজেলা সদরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদের হালও একই রকম। ফলে জেলার ব্যাবসা–বাণিজ্য, কৃষি-শিল্প ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশুদ্ধ বাতাসে নিশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে পাবনাবাসীর। 

গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদী দুটি রক্ষায় জেলাবাসী দীর্ঘদিন আন্দোলন–সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। কিন্তু নদ-নদী রক্ষায় কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার পাবনা সফরে আসছেন। তাঁর এই সফর উপলক্ষে আজ শনিবার সকালে ইছামতী পাড়ে কাফনের কাপড় পরে মানবন্ধন ও বড়াল পাড়ে সমাবেশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। ইছামতী রক্ষা আন্দোলন কমিটি শহরের খেয়াঘাট সড়ক ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি চাটমোহর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করে।

আজ ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ভোর থেকেই শহরে বৃষ্টি হচ্ছিল। এর মধ্যেই সকাল ১০টার দিকে নদী উদ্ধারের দাবিতে শহরবাসী ইছামতী পাড়ে এসে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে তাঁরা কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধনে দাঁড়ান। বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে ইছামতী দখলমুক্ত করে খননের দাবি তুলে বিভিন্ন পোস্টার–ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। মানববন্ধনে অংশ নেন স্থানীয় সরকার পরিষদের প্রতিনিধি, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

বক্তারা জানান, স্বাধীনতার পর প্রায় ১০ বছর নদীটি সচল ছিল। শহরে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর দুই পাড় দখল হয়েছে। ২০০৫ সালে জেলা প্রশাসন ৫ কিলোমিটার নদী এলাকায় প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট দখল হয়ে যাওয়া জমি ও ২৮৪ জন দখলদার চিহ্নিত করেছে। কিন্তু নদীটি দখলমুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফরে দিন দিন দখল আরও বাড়ছে।

পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম বলেন, ‘আমরা পাবনার জনগণ। যাঁরা ইছামতী পাড় দখল করেছেন তাঁরাও পাবনারই সন্তান। ইছামতী রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। সর্বস্তরের মানুষ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করলে ইছামতী আবার আগের রূপ ফিরে পাবে বলে আশা করি।’

সভাপতির বক্তব্যে ইছামতী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি এস এম মাহবুব আলম বলেন, ইছামতী দখলমুক্ত ও খননের দাবি এখন পাবনাবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অনেকবার সভা, সমাবেশ, মিছিল , মিটিং, মানববন্ধন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত জেলাবাসীকে কাফনের কাপড় পরতে হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নদী উদ্ধারে কার্যত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হবে ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।

প্রবীণ শিক্ষক মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস, জেলা নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান, আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কে এম আবুল কালাম আজাদ, সেলিম নাজির উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বড়াল রক্ষার দাবিতে বিকেলে চাটমোহর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সমাবেশ করে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি। সমাবেশে বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজশাহী, চারঘাট, নাটোর, লালপুর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার নেতারা অংশগ্রহণ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির সার্বক্ষণিক সদস্য আলাল উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম জহুরুল হক, চাটমোহর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে বড়ালসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদী দখলমুক্ত করে খননের দাবি তোলা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদী আমাদের অস্তিত্ব, নদী আমাদের ঐতিহ্য। তাই দেশের সব নদী উদ্ধার করা হবে। ঢাকায় যদি ২০ তলা ভবন ভেঙে ফেলা যায় তবে পাবনায়ও সেটা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি দায়িত্বে অবহেলা করেন তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।