হেফাজতের তাণ্ডবের ৬ বছর: ৬২ মামলার তদন্তই হচ্ছে না

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধকালে হেফাজতকর্মীদের তাণ্ডব।  ফাইল ছবি
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধকালে হেফাজতকর্মীদের তাণ্ডব। ফাইল ছবি

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৬২টি মামলার তদন্ত থেমে আছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় এসব মামলার তদন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডবের ঘটনায় এসব মামলা করা হয়েছিল। আজ রোববার সেই ঘটনার ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সমঝোতার কারণে এসব মামলা নিয়ে তাঁরা গা করছেন না। হেফাজতে ইসলামের নেতারাও বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে সরকারের যে কথা হয়েছে, তাতে সরকার এসব মামলা প্রত্যাহার করে নেবে—এমনই আশা করছেন তাঁরা।

 হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় সারা দেশে মোট ৮৩টি মামলা হয়। এর মধ্যে বাগেরহাটের একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে। রায়ে সব আসামি খালাস পেয়েছেন। দুটি মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। বাকি ১৮ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও বিচার শুরু হয়নি।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে জানান, হেফাজতের বিরুদ্ধে রাজধানীতে করা ৪৯ মামলার তদন্ত চলছে। ঢাকার বাইরে বাকি ছয় জেলায় হওয়া মামলার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এসব দাবিতে ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি শেষে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক। এর আগে দিনভর পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। ওই দিন রাতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানের মুখে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এতে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হন। তবে পরে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সমঝোতা হয়। তাদের দাবির মুখে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান বলে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। দাবি অনুযায়ী পাঠ্যবইয়েও পরিবর্তন আনা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় যে মামলাগুলো দায়ের করা হয়, তাতে ৩ হাজার ৪১৬ জনের নামসহ ৮৪ হাজার ৯৭৬ জনকে আসামি করা হয়। তবে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীকে কোনো মামলাতেই আসামি করা হয়নি। পরে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবশ্য পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী গতকাল শনিবার বলেন, ‘শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা পূরণ করা হয়নি। আশা করি, সেই অনুযায়ী সরকার আমাদের মৌলিক দাবিগুলো পূরণ করে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেবে।’