নতুন ব্রি ৮১ ধানে কৃষকের মুখে ফুটল হাসি

শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নে খেতে ব্রি ৮১ ধান।  ছবি: প্রথম আলো
শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নে খেতে ব্রি ৮১ ধান। ছবি: প্রথম আলো

বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজ পাতার ফাঁক গলে হলুদ রঙের ধানের শিষের ছড়াছড়ি। ঘূর্ণিঝড় ফণীর আগেই সেই সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পেরে কৃষকের মুখে চওড়া হাসি। এই চিত্র গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের। তবে এটি কোনো প্রচলিত ধান নয়, এটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত নতুন ব্রি ৮১ জাতের ধান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মূয়ীদুল হাসান জানান, গত বছর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এই জাতের ধানের মাত্র ৪ কেজি বীজ এনে রাজাবাড়ির কৃষক মহারাজ চন্দ্র দাসের প্লটে লাগানো হয়। তখন প্রতি হেক্টরে ৬ দশমিক ৫ টন ধান উৎপাদিত হয়। তা ছাড়া গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে ব্রি ২৮ ও ৮১ জাতের ধানের পাশাপাশি প্লট করা হয়। সে সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ব্রি ২৮ জাতের ধান হেলে পড়লেও ৮১ জাতের ধান গাছ হেলে পড়েনি। তিনি আরও জানান, সে সময় ঝড়ের কবলে পড়েও ধানগাছ খাড়া থাকার বিষয়টি দেখে গ্রামের কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হন। তাঁরা মাঠ থেকেই বীজগুলো প্রায় ১৪ শ টাকা মণ দরে কিনে নিয়ে যান।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইরিন সুলতানা বলেন, এ বছর শুধু শ্রীপুরের রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ২ শর বেশি কৃষক ব্রি ৮১ জাতের ধানের চাষ করেছেন। তাঁরা এই ধানের ভালো উৎপাদন পেয়ে খুশি।

রাজাবাড়ি গ্রামের কৃষক বেলায়েত হোসেন বলেন, তিনি ব্লাস্ট রোগের ভয়ে ছিলেন। কিন্তু কোনো রোগের আক্রমণ ছাড়াই খুব ভালো ধান উৎপাদন করতে পেরেছেন তিনি। তাঁর তিন বিঘা জমিতে এ ধানের উৎপাদনে তিনি সফল হয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে বীজ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকেরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। একই ইউনিয়নের চিনাশুকানিয়া গ্রামের মোজাম্মেল কাজী তাঁর ২ বিঘা জমিতে ব্রি ৮১ ধানের চাষ করেছেন। তিনি ২ বিঘা জমিতে ৫৪ মণ ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, এ জাতের ধানের চাল খুব সরু হওয়ায় খেতে সুস্বাদু। গজারিয়া গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, ঝড়ে অন্য জাতের ধান নুয়ে পড়লেও ব্রি ৮১ সোজা দাঁড়িয়ে ছিল। ফলে ধান কাটার কাজটা খুব সহজ হয়েছে। আর ধানের উৎপাদন অন্য জাতের ধানের চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) তমাল লতা আদিত্য প্রথম আলোকে জানান, এই ধান ব্রি ২৮ জাতের পরিপূরক। এটি ব্রি ২৮–এর চেয়ে চিকন। এটি বাসমতীর মতো রান্না করার পর দেড় গুণ লম্বা হয়ে যায়। এই জাতের ধানের চালে অ্যামাইলোজ বেশি, যার পরিমাণ ২৫ শতাংশের ওপর। ভাত ঝরঝরে ও খেতে সুস্বাদু। ধান থেকে তৈরি আতপ চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। ঝড়বৃষ্টিতে ব্রি ২৮ ধান হেলে পড়লেও নতুন ব্রি ৮১ ধান হেলে পড়ে না। এর কাণ্ড অনেক শক্ত হয়ে থাকে। এ জাতের ধানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ধান পাকার পরও পাতাগুলো সবুজ থাকে। এতে প্রোটিন থাকে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ব্রি ২৮–এ থাকে ৮ শতাংশ। এই ধান মাঝারি উঁচু জমি থেকে উঁচু জমিতে খুব ভালো ফলন দেবে। সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, নাটোর অঞ্চলে এই ধানের ফলন অনেক ভালো পাওয়া যাবে। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ টন।