স্ত্রীসহ তিতাসের সাবেক এমডির বিরুদ্ধে মামলা

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নওশাদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী রাজিয়া নওশাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার রাজধানীর রমনা মডেল থানায় দুটি মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞা।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রণব ভট্টাচার্য বলেন, এ দুজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ থাকলেও বনানীতে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে নওশাদ ইসলামকে তিতাসের এমডির পদ থেকে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও তার আগেই মন্ত্রণালয় গঠিত একটি তদন্ত কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পায়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে তিতাসের একটি সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন করে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারও আগে ২০১৫ সাল থেকে নওশাদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। নওশাদ ইসলাম বর্তমানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের মার্চে নওশাদুল ইসলামকে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ দেয় দুদক। ওই মাসেই তিনি তা দুদকে জমা দেন। তাঁর জমা দেওয়া সম্পদের হিসাব ও অন্যান্য সূত্রে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে সম্পদের পর্যালোচনায় দেখা যায়, নওশাদ ইসলাম অবৈধভাবে উপার্জিত ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৮৩ টাকার সম্পদ দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ না করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার ৬০৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন।
অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, নওশাদ ইসলামের স্ত্রী রাজিয়া নওশাদ ২০০৮ সালে ধানমন্ডিতে ৯২ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। নওশাদ ইসলাম তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে ২৫ লাখ টাকা সরাসরি পরিশোধ করেন। ফ্ল্যাটে তাঁর বিনিয়োগের এই তথ্য তিনি তাঁর আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেননি, যা আইনে বাধ্যতামূলক।
নওশাদের স্ত্রী রাজিয়া নওশাদের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনি দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ৪২ লাখ ১ হাজার ২০০ টাকার সম্পদের গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া ১ কোটি ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার ৯০১ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন।
দুদক বলছে, রাজিয়া নওশাদ একজন গৃহিণী। তাঁর নামে ধানমন্ডিতে ২ হাজার ২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। এটির দাম ৯২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তাঁর নামে ঢাকার ডেমরায় সাড়ে ৭ শতাংশ নাল জমি, নারায়ণগঞ্জে বন্দর থানার দক্ষিণ কুলচরিত্র মৌজায় ২৩ শতাংশ নাল জমি, বেজেরগাঁও মৌজায় ১৩ শতাংশ নাল জমি এবং ফতুল্লা থানা এলাকায় ১৫ শতাংশ নাল জমি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকে জমাসহ তাঁর সম্পদ দেখিয়েছেন ৩৪ লাখ টাকারও বেশি। অথচ এগুলোর কোনো বৈধ উৎস নেই। এর বাইরে স্বামীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ২৫ লাখ টাকার তথ্যও তিনি গোপন করেছেন। আয়কর নথিতেও দেখাননি।