খাল খননে মিলল মানবকঙ্কাল

সাপাহার উপজেলার জবই বিল এলাকায় খাল খনন করতে গিয়ে মাথার খুলি ও হাড়গোড় পাওয়া যায়। নওগাঁ, ০৫ মে। ছবি: সংগৃহীত
সাপাহার উপজেলার জবই বিল এলাকায় খাল খনন করতে গিয়ে মাথার খুলি ও হাড়গোড় পাওয়া যায়। নওগাঁ, ০৫ মে। ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার জবই বিলে খাল খনন করতে গিয়ে মানবদেহের পাঁচটি কঙ্কাল পাওয়া গেছে। রোববার সকালে উপজেলার শিরন্টি ইউনিয়নের জবই বিলে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা সেতুর কাছে খাল খননের সময় শ্রমিকেরা কঙ্কালগুলো দেখতে পান। এ খবর জানাজানির পর এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে ভিড় জমান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও খালখনন শ্রমিক সূত্রে জানা যায়, এক মাস ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধানে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলের মধ্য দিয়ে যাওয়া দোহার খাল খননের কাজ চলছে। রোববার সকাল ১০টার দিকে জবই বিলের মহিষডাঙ্গা সেতু এলাকায় এক্সকাভেটর (ইঞ্জিনচালিত মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে খাল খননের সময় পাথর খণ্ডের মতো শক্ত কিছু উঠে আসে। পরে শ্রমিকেরা পরীক্ষা করে দেখতে পান সেগুলো মানবদেহের বিভিন্ন অংশের হাড়। এরপর সেগুলো এক সঙ্গে করে মাথার খুলিসহ মোট পাঁচটি কঙ্কাল পাওয়া যায়। এ খবর জানাজানি হলে স্থানীয় উৎসুক জনতা কঙ্কাল দেখতে সেখানে ভিড় জমান। অন্যদিকে কঙ্কালগুলোর ব্যাপারে প্রশাসনিকভাবে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থানীয় লোকজন সেগুলো মাটির নিচে পুঁতে ফেলেন।

এ ব্যাপারে শিরন্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাকী বলেন, বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইউএনও অফিস ও থানায় জানিয়েছেন। এর আগে ২৮ এপ্রিল খাল খননের সময়ও কিছু কঙ্কাল উদ্ধার করে মাটিতে পুঁতে ফেলেন স্থানীয় লোকজন। তিনি আরও বলেন, ২০০৫ সালে জবই বিলের মাটি খননের সময়ও বেশ কিছু কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল।

চেয়ারম্যান বাকী বলেন, কঙ্কালগুলো ঠিক কোন সময়ের, তা জানা যায়নি। তবে এ ব্যাপারে বেশ কিছু জনশ্রুতি শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ এলাকায় ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিল। জবই বিলে একাধিক গণকবর খুঁড়ে সেই সব শহীদের লাশ পুঁতে ফেলেছিল হানাদার বাহিনী। আবার কেউ ধারণা করছেন, অতীতে কোনো সময় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া মানুষের কঙ্কাল হতে পারে। এ ছাড়া অনেকে বলছেন, বহু আগে জবই বিলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লাশ দাহ করার শ্মশান ছিল।

সাপাহার থানার ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম শাহ জানান, স্থানীয়দের অভিমত, কঙ্কালগুলো বহু পুরোনো। সাম্প্রতিককালের কোনো ঘটনা না হওয়ায় এ ব্যাপারে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ জন্য কঙ্কালগুলো নির্দিষ্ট কোনো স্থানে পুঁতে রাখতে বলা হয়েছে স্থানীয় লোকজনকে। প্রশাসনের নির্দেশ পেলে ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সাপাহার উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হামিদ রেজা বলেন, কঙ্কালগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা নেই তাঁর। খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল ওই বিলের আরেকটি অংশে খনন করার সময় ১২টি কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল।