আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত হত্যার ঘটনায় ৪ সাক্ষীর জবানবন্দি

নুসরাত জাহান
নুসরাত জাহান

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় চারজন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার বিকেলে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইন তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

যাঁরা জবানবন্দি দিয়েছেন, তাঁরা হলেন নুসরাতের সহপাঠী নিশাত সুলতানা, নাসরিন সুলতানা, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন ও মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফা। জবানবন্দির রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

চারজনের মধ্যে অন্যতম সাক্ষী নাসরিন সুলতানা আদালতকে বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তাঁকে তাঁর কক্ষে ডেকে পাঠান। মাদ্রাসায় ও পরীক্ষায় নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন অধ্যক্ষ। সেই সঙ্গে বাড়িতে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বলেন। সব শেষে গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন তিনি। অধ্যক্ষের এ ধরনের আচরণের বিষয়টি রাতে তাঁর বাবাকে জানান। তাঁর বাবা এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরাবর লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদ এতে সাড়া না দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়।’

গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুসরাতকে তাঁর কক্ষে ডেকে পাঠান। এ সময় নুসরাতের দুই বান্ধবী নিশাত সুলতানা, নাসরিন সুলতানা সঙ্গে যান। কিন্তু তাঁদের দুজনকে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। অধ্যক্ষ ওই দিন নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এই ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ২৮ মার্চ অধ্যক্ষের খুব কাছের মানুষ নুর উদ্দিন নুসরাতকে তাঁর মায়ের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেন এবং আইসিটি পরীক্ষার ভাইভাতে ফেল করিয়ে দেবেন বলে জানান। ৪ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার্থী মো. শামীম নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন। এরপর ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে তাঁকে জানানো হয়, নিশাত সুলতানাকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলার ছাদে মারধর করা হচ্ছে। সেখানে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে ফের চাপ দেওয়া হয়। নুসরাত এতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন শামীম, জাবেদসহ পাঁচজন। ওই সময় নিজেদের পরিচয় গোপন করতে শামীম, জাবেদসহ তিনজন পুরুষ হাত মোজা ও বোরকা পরেছিলেন। পাঁচজনের মধ্যে দুজন নারী ছিলেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এজাহারভুক্ত আটজনসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৮ জন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অধ্যক্ষ সিরাজসহ নয়জন আসামি ঘটনায় দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।