আংশিক কমিটিতেই মেয়াদ ফুরোল মহানগর দক্ষিণ বিএনপির

আংশিক কমিটি ঘোষণার সময় নির্দেশনা ছিল, এক মাসের মধ্যেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। দিন–মাস–বছর গড়িয়ে কমিটিরই মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর হলোই না।

ভঙ্গুর কমিটি নিয়ে গত জাতীয় নির্বাচনের সময় কোনো আন্দোলন কিংবা নির্বাচনী কার্যক্রম জমিয়ে তুলতে পারেনি দলটি। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এই কমিটি আদৌ পূর্ণাঙ্গ করা হবে, নাকি নতুন করে কমিটি হবে—এ নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খানকে (সোহেল) সভাপতি ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আবুল বাসারকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা বিএনপির ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে ২৬ জনকে সহসভাপতি, ১৯ জনকে যুগ্ম সম্পাদক, ১৮ জনকে সহসাধারণ সম্পাদক, তিনজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দপ্তর সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের নাম ঘোষণা করা হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কমিটি অনুমোদন করে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিএনপির মহানগর কমিটিগুলোর মেয়াদ দুই বছর করে। সে হিসাবে, দক্ষিণ বিএনপির কমিটির মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ আর নেওয়া হয়নি।

দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সাত মাস ধরে কারাগারে। নেতা-কর্মীদের কাছে সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসারের খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই। গত ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের পরে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দুই নেতা পদত্যাগ করেন। সব মিলিয়ে দলীয় কার্যকম কার্যত স্থবির। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনে দক্ষিণ বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে ঘোষিত কমিটির ৭০ জনের মধ্যে কেবল পাঁচ নেতা অংশ নেন।

নগর বিএনপির নেতারা বলছেন, সাবেক ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হাবিব–উন–নবী ঢাকা মহানগর দায়িত্ব পাওয়ার আগে মহানগরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এ ছাড়া তিনি কমিটি গঠনে নগরের শীর্ষ নেতাদের সহযোগিতা পাননি। নিজেও যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেননি। পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নগর বিএনপির ভঙ্গুর অবস্থা থেকে এখনো উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হয়নি।

নেতা–কর্মীরা বলেন, নগর কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়েও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। কেন্দ্র থেকে নগরের কার্যক্রম কখনো তদারক করা হয়নি। ফলে কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা কেবল কাগজে–কলমেই রয়ে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিগগিরই এসব বিষয় নিয়ে আলাপ–আলাচনা করব।’ তবে দক্ষিণ শাখা বিএনপির কমিটি প্রসঙ্গে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।

এর আগে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খানকে সদস্যসচিব করে কমিটি করা হয়। ওই আহ্বায়ক কমিটি নগরের কমিটি, থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে কোনো কমিটি করতে পারেনি। এতে নগর বিএনপির কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। পরবর্তী সময়ে নগর বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করতেই নতুন কমিটি করা হয়। তবে এতেও ফল পায়নি বিএনপি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দক্ষিণ বিএনপির দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই কয়েক বছর ধরে বিএনপি রাজনীতি করছে। এমন পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম থেমে থাকেনি। নগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারাটা শীর্ষ নেতাদের ব্যর্থতা। আন্তরিকতার ঘাটতি থাকার কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি। তবে আরেক নেতা বলেন, আংশিক কমিটি ঘোষণার পর প্রতি সপ্তাহে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা এবং পরবর্তীকালে গায়েবি মামলায় নেতা–কর্মীদের ধরপাকড় শুরু হওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি।

এদিকে মহানগর দক্ষিণের অধীনে থাকা ২৪টি থানার মধ্যে কেবল তিনটিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়েছে। নগরের দায়িত্বশীল নেতাদের বেশির ভাগই বলছেন দক্ষিণ শাখা বিএনপির সভাপতি দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া থমকে গেছে। অনেক নেতার দাবি, এই কমিটির মধ্যে যাঁরা সক্রিয় ছিলেন, তাঁদের রেখে নতুন করে কমিটি করা উচিত।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সাংগঠনিক অবস্থান জানাতে তাঁদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি প্রতিকূল ছিল। পরিস্থিতি ধারণার চেয়েও বেশি অস্বাভাবিক ছিল। পাশাপাশি সভাপতি কারাগারে থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি।’