টিফিনের জমানো টাকায় মানবসেবা

টিফিনের জমানো টাকায় কেনা চিকিৎসাসামগ্রী গতকাল একটি ফার্মেসিতে হস্তান্তর করে শিক্ষার্থী।  প্রথম আলো
টিফিনের জমানো টাকায় কেনা চিকিৎসাসামগ্রী গতকাল একটি ফার্মেসিতে হস্তান্তর করে শিক্ষার্থী। প্রথম আলো

পাবনার বেড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওরা। সংখ্যায় প্রায় ২৫। অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো ওরাও বাড়ি থেকে টিফিনের টাকা নিয়ে ক্লাসে আসে। কিন্তু সেই টাকায় টিফিন না কিনে প্রতিদিনই তা জমিয়ে রাখে। শুধু তা–ই নয়, স্কুলে যাতায়াতের জন্য পাওয়া টাকাও জমানোর চেষ্টা করে ওরা। কেউ কেউ রিকশায় না উঠে যত দূর পারে হেঁটেই যাতায়াত করে। আর এভাবে জমানো টাকায় দুস্থদের নানাভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে ওরা।

মানবকল্যাণের জন্য ওরা ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গড়েছে। প্রায় তিন বছর ধরে সংগঠনের শিক্ষার্থীরা নিজেদের জমানো টাকায় অন্তত ১০ জন হতদরিদ্র অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করিয়েছে। বেড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, কলম কিনে দিয়েছে। এরই মধ্যে দুস্থদের চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য ওরা বেশ কিছু ওষুধ কেনার পাশাপাশি রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্তচাপ, ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র এবং থেরাপি ও নেবুলাইজার যন্ত্র কিনেছে। এসব যন্ত্র ও ওষুধ গতকাল রোববার তারা পৌর এলাকার কানাইবাড়ি মোড়ে অবস্থিত ‘যায়েদ মেডিকেল হল’ নামের একটি ফার্মেসিতে রেখেছে। সেখান থেকে দুস্থ রোগীরা বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ মাপাতে পারবেন। এ ছাড়া দুস্থ রোগীরা বিনা মূল্যে কিছু ওষুধও পাবেন।

গতকাল সকাল নয়টায় শিক্ষার্থীরা ফার্মেসিটির মালিকের কাছে এসব যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করে। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জিল্লুর রহমান সেখানে উপস্থিত হন। এমন সেবামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানান।

শেখ জিল্লুর রহমান বলেন, ‘টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ওরা যে মহৎ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, তা অনুকরণীয়। ওদের কর্মকাণ্ডের খবর পেয়ে অভিভূত হয়ে আমি এখানে এসেছি। আমি চাই, ওদের দেখে অন্যরাও দুস্থদের পাশে গিয়ে দাঁড়াক।’

যায়েদ মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক রাশেদুল ইসলাম বলেন, অর্থের অভাবে চিকিৎসা না হতে দেখে কয়েক দিন আগে ওরা দুই হাজার টাকা খরচ করে এক দুস্থ রোগীকে সুস্থ করেছে। এ ধরনের কাজ ওরা নিয়মিত করছে। ওদের সমর্থন জানাতে ও কাজে শামিল হতে তিনি তাঁর দোকানে ওদের দেওয়া চিকিৎসাসামগ্রী রেখেছেন। এগুলো দিয়ে প্রকৃত অসহায় মানুষদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। বেড়া পৌর এলাকার মানিক মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বারী বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক আগে ওরা আমার বিদ্যালয়ে এসে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বই, খাতা ও কলম বিতরণ করেছে।’